যুদ্ধাপরাধের পরোয়ানার মধ্যেই হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ ট্রাম্পের
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটি হবে হোয়াইট হাউসে তাঁর সঙ্গে প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রনেতার বৈঠক।
ফিলিস্তিনের গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত বছর ২১ নভেম্বর আইসিসি নেতানিয়াহু, ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট এবং হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগ, ইসরায়েল দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে গাজায় মানবতাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যেখানে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ, খাদ্য সংকট তৈরি এবং হাসপাতাল-নির্মাণ স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তবে ইসরায়েল বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং আইসিসির সিদ্ধান্তকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে দাবি করেছে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও তাঁকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানিয়ে ট্রাম্প স্পষ্ট বার্তা দিলেন যে, ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অটল সমর্থন অব্যাহত থাকবে। এমন সময়ে এই সফর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন ছয় সপ্তাহের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে গাজায় সাময়িক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর এই সফর নতুন করে উত্তেজনা উসকে দিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।
নেতানিয়াহুর সফরের ঘোষণার পরই ট্রাম্প নতুন করে গাজা ফিলিস্তিনশূন্য করার প্রসঙ্গ তুলেছেন। এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি চাই মিসর গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিক।’ ট্রাম্প মনে করেন, গাজার জনগণ এমন এক স্থানে বসবাস করুক, যেখানে তারা বিদ্রোহ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
এছাড়া, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে সরাসরি অনুরোধ জানিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি আশা করি, তিনি কিছু ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দেবেন। আমরা মিসরকে অনেক সহায়তা করি, সুতরাং তিনিও আমাদের সহায়তা করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে মিসর ও জর্ডান। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে বের করে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, গাজাকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অন্যদিকে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাস ইতোমধ্যে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে, বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েক শ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেতানিয়াহুর মার্কিন সফর এবং ট্রাম্পের গাজা ফাঁকা করার প্রস্তাব এই শর্তাধীন শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
ইসরায়েলের দাবি, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে। অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৪৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
বিশ্ববাসীর চোখ এখন ওয়াশিংটন সফরে নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। তবে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যে নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর যে কূটনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।