হাসিনার গোপন কারাগারে শিশুরাও ছিল বন্দি, দেওয়া হতো না মায়ের দুধ
বাংলাদেশের সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের গোপন কারাগারে শিশুদেরও বন্দি রাখার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, শেখ হাসিনার আমলে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ এবং তদন্তকারী কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ ধরনের নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ পাওয়া গেছে।
কমিশন জানায়, শেখ হাসিনার সরকার বিরোধীদের চাপে রাখতে শিশুদেরও জিম্মি করত। মাসের পর মাস শিশুদের তাদের মায়েদের সঙ্গে আটক রাখা হতো। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় মানসিক চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে শিশুদের ব্যবহার করা হতো। একাধিক ঘটনায় শিশুদের মায়ের দুধ পান করানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
২০২৩ সালের গুমের এক ঘটনায় দেখা গেছে, এক গর্ভবতী নারীকে তার দুই শিশুসন্তানসহ আটক করা হয়েছিল। সেই আটক কেন্দ্রে তাকে মারধর করা হয়। আরেক ঘটনায়, একটি পরিবারকে পুরোপুরি বন্দি করে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিশুটিকে মায়ের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়, যাতে বাবার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা যায়।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, গুম, এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
কমিশনের তদন্তে জানা গেছে, এই নির্যাতনের পেছনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জড়িত ছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, তাকে শিশু অবস্থায় মায়ের সঙ্গে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, কিন্তু তার মা আর কোনোদিন ফিরে আসেননি।
কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি থেকে নির্যাতনের জন্য দায়ী বাহিনী এবং তাদের কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবার গুরুতর মানসিক আঘাতসহ আর্থিক ও আইনি সমস্যায় পড়েছে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের নিখোঁজের কারণ হাসিনা সরকার অস্বীকার করেছিল। তারা দাবি করেছিল, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে সাগরে ডুবে মারা গেছে। তবে কমিশনের মতে, এখনও প্রায় ২০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এই ভয়াবহ চিত্র প্রমাণ করে, ক্ষমতাসীন থাকার সময় শেখ হাসিনার সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। গুম ও নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলো এখনও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।