ইউক্রেন ইস্যুতে সুর পাল্টালো চীন, জানালো ট্রাম্পকে সমর্থন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার চুক্তির প্রচেষ্টাকে এবার প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছে চীন। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে বেইজিং তাদের নতুন অবস্থান স্পষ্ট করে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ওয়াশিংটন ও মস্কোর সাম্প্রতিক ঐকমত্যসহ যে কোনো উদ্যোগকে বেইজিং স্বাগত জানায়। তিনি আরও জানান, চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চীন সবসময় প্রস্তুত।
অবশ্য এক সপ্তাহ আগেও চীনের অবস্থান কিছুটা ভিন্ন ছিল। মিউনিখে আয়োজিত নিরাপত্তা সম্মেলনে ওয়াং বলেছিলেন, ইউক্রেন সংকট নিরসনে যেকোনো আলোচনা হতে হলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অংশগ্রহণ জরুরি। কিন্তু সর্বশেষ বক্তব্যে তিনি এমন একটি প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ইউক্রেনের ভূমিকা একেবারেই অনুপস্থিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্পের নীতিগত পরিবর্তনের কারণেই চীনের অবস্থান পাল্টেছে। সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা পররাষ্ট্র নীতিতে তাদের পূর্বসূরিদের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত বজায় রাখেন, বিশেষ করে মিত্র ও প্রতিপক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। কিন্তু ট্রাম্প যেন বাইডেন প্রশাসনের সবকিছু উল্টে ফেলার মিশনে নেমেছেন।
তিনি মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন এবং সৌদি আরবে ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন। পশ্চিমা দেশগুলোর ঐক্য ভেঙে রাশিয়ার ওপর মার্কিন প্রভাব বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে চীনের উদ্বেগ বেড়েছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এতদিন রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে থাকায় চীন ইউরোপের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সুযোগ পাচ্ছিল। কিন্তু ট্রাম্প হঠাৎ করে রাশিয়াকে স্বাভাবিক কূটনৈতিক পরিসরে ফিরিয়ে আনতে চাইলে চীনের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়তে পারে।
টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল চেঞ্জের চীন-বিষয়ক অধ্যাপক রুবি ওসমান বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প সরাসরি পুতিনকে আলোচনার টেবিলে এনে চীনের কৌশলগত অবস্থানকে দুর্বল করেছেন। ফলে বেইজিং এখন বিকল্প উপায়ে ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোতে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছে।’’
এরই মধ্যে সৌদি আরবে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের পর উভয় পক্ষই জানিয়েছে, আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও আলোচনা চলবে। তবে রাশিয়া আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে তারা কোনো ছাড় দেবে না।
এই নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ কীভাবে বিশ্ব কূটনীতিতে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনই স্পষ্ট কোনো পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। তবে চীনের সুর বদল এবং ট্রাম্পের কৌশলগত পদক্ষেপ বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।