অর্থপাচার রোধে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি টিআইবিসহ তিন সংস্থার আহ্বান
যুক্তরাজ্যে সফররত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের প্রেক্ষাপটে অর্থপাচার রোধে দেশটির সরকারের প্রতি জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী তিনটি সংগঠন—ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে। মঙ্গলবার টিআইবি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশি অলিগার্কের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পাচার হওয়া সম্পদ জব্দ করে তা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য অবজারভারের এক যৌথ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন যুক্তরাজ্যে অন্তত ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করেছে।
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ইউনূস তার সফরে শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের বাইরে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ ফেরত আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার করে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “অর্থপাচারের স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার যাত্রার এই সম্ভাবনাময় সময়ে যুক্তরাজ্য সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে—অর্থপাচারকারীরা শুধু উৎস দেশ নয়, গন্তব্য দেশেও জবাবদিহির আওতায় আসবে।”
স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, “সময় নষ্ট না করে এখনই যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া এবং আইনি কার্যক্রম জোরদার করা।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস বলেন, “যেহেতু যুক্তরাজ্য অর্থপাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তাই শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদের তদন্ত করে তা জব্দ করা উচিত। শুধু কূটনৈতিক বক্তব্য নয়, বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমেই যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহযোগী হতে হবে।”