রবিবার, ২৫শে মে, ২০২৫| রাত ৪:০১

যুক্তরাষ্ট্রে রেমিট্যান্সে ৫% করের প্রস্তাব: বৈদেশিক আয় সংকটে বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
staffreporter
মে ২১, ২০২৫ ৫:৫২ অপরাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রে রেমিট্যান্সে ৫% করের প্রস্তাব: বৈদেশিক আয় সংকটে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রে রেমিট্যান্সে ৫% করের প্রস্তাব: বৈদেশিক আয় সংকটে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসী আয়, বিশেষ করে রেমিট্যান্স। তবে সম্প্রতি এই খাতটি নতুন এক শঙ্কার মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নামে একটি বিলের মাধ্যমে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এটি ইতোমধ্যেই মার্কিন কংগ্রেসের হাউজ বাজেট কমিটিতে অনুমোদন পেয়েছে।

নতুন এই কর নীতির আওতায় গ্রিন কার্ডধারী ও এইচ-১বি ভিসাধারী বাংলাদেশিরাও পড়বেন, এবং যেকোনো অঙ্কের রেমিট্যান্সেই এই কর প্রযোজ্য হবে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এতে বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর খরচ বেড়ে যাবে এবং প্রবাসীরা হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকতে পারেন। ফলে বৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের ধাক্কা দেবে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ রেমিট্যান্সপ্রাপ্ত দেশ, যার বড় একটি অংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে প্রায় ৪২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১০৩ শতাংশ বেশি। এই সময়ের হিসাবেই ৫ শতাংশ কর কার্যকর হলে প্রায় ২১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল জানান, রেমিট্যান্স হলো দায়বিহীন বৈদেশিক আয়, যার বিপরীতে কোনও বৈদেশিক দায় থাকে না। তিনি বলেন, কর আরোপ হুন্ডি তৎপরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এর প্রতিকারে ডলারের বিনিময় মূল্যকে বাজারভিত্তিক এবং আকর্ষণীয় করতে হবে।

বিআইডিএস-এর গবেষক ড. জায়েদ বখতের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা তুলনামূলক উচ্চ আয়ের এবং স্থিতিশীল চাকরিতে যুক্ত থাকায় প্রভাব কিছুটা সীমিত থাকতে পারে, তবে নিম্ন আয়ের অভিবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি মাসে ৩০০-৪০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। এতে ৫ শতাংশ কর বসলে প্রতিমাসে ১৫-২০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হারানোর শঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের নীতি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারত, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, চীন ও মিসরের মতো সব উন্নয়নশীল দেশের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের রেমিট্যান্সের অন্যতম প্রধান উৎস।

এর আগে ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দেন, যা বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের ওপর প্রযোজ্য হয়। যদিও পরে ৯ এপ্রিল কিছু দেশের জন্য শুল্কনীতি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এখনও ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে হ্রাস ঘটলে তা সরাসরি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে যখন ডলারের চাহিদা বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ও আমদানি ব্যয়ের কারণে, তখন এমন সংকট মোকাবিলায় বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা এবং বৈধ রেমিট্যান্স চ্যানেলকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি