হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ধৈর্য ধরার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের
হাতি ও মানুষের মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ ক্ষেত্রে সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “মানুষ যেমন জীবনের অধিকার রাখে, তেমনি হাতিও একটি জীবন্ত প্রাণী—তারও টিকে থাকার অধিকার রয়েছে।”
সোমবার শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্কে হাতি-মানুষ দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, মানুষ হাতির আবাসস্থল দখল করে নিচ্ছে, যার ফলে হাতির খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। তিনি বিদেশি ইউক্যালিপটাসসহ অনুপযোগী গাছ না লাগিয়ে দেশীয় প্রজাতির, হাতির উপযোগী গাছ রোপণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হলে আমরা কেউই নিরাপদ থাকব না। বন ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বাণিজ্যিক গাছ নয়, প্রাকৃতিক গাছই লাগাতে হবে।” এ সময় জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমেই এ সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। মুখ্য আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান। উপস্থিত ছিলেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান, কেন্দ্রীয় বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্লাহ পাটওয়ারী, বিজিবি কমান্ডার লে. কর্নেল তানভির হোসেন মজুমদার, ইআরটির সদস্য ইমতিয়াজ আলী ও মোহাম্মদ হাসমত আলী।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা হাতির আক্রমণে নিহত দুই পরিবারকে মোট ৬ লক্ষ টাকা এবং ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ১৫ পরিবারকে ৩ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা প্রদান করেন। পাশাপাশি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যদের মাঝে বাইনোকুলার, টর্চ লাইট, হ্যান্ডমাইক ও হুইসেলসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়।
এর আগে তিনি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দাওধারা গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্র এবং মধুটিলা রেঞ্জের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাগান প্রকল্প পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত হাতি-মানুষ দ্বন্দ্বে প্রাণ হারানো ৪৫ জনের পরিবারকে ৯১ লক্ষ টাকা, আহত ৩৪ জনকে ১০ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা এবং ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতির জন্য ৯০৬ জনকে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। সর্বমোট ৯৮৫ জন ক্ষতিগ্রস্তকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ।