শুক্রবার, ৬ই জুন, ২০২৫| রাত ১০:৪১

ব্যাংকে আস্থা ফিরলেও নগদ টাকার প্রবাহে বাড়ছে উদ্বেগ

প্রতিবেদক
staffreporter
মে ১১, ২০২৫ ১:৫৮ অপরাহ্ণ
ব্যাংকে আস্থা ফিরলেও নগদ টাকার প্রবাহে বাড়ছে উদ্বেগ

ব্যাংকে আস্থা ফিরলেও নগদ টাকার প্রবাহে বাড়ছে উদ্বেগ

চলমান মূল্যস্ফীতি, ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা ও ব্যাংকিং খাতে কিছুটা আস্থার ফিরে আসা— এই তিনটি বাস্তবতা মার্চ মাসে দেশের অর্থনীতিকে দুই ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছে। একদিকে ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে, যা ইতিবাচক। অন্যদিকে একই সময়ে ব্যাংকের বাইরে অতিরিক্ত ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো নগদ অর্থ চলে গেছে, যা অর্থনীতিবিদদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, মার্চে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ১৮০ কোটি টাকা— যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৫১ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চে এটি ছিল ১৬ লাখ ৭৫০ কোটি টাকা। এটি ২০২৪ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জনগণ আবার ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে শুরু করেছে। এর পেছনে নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের ভূমিকা রয়েছে— যেমন দুর্বল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, বেনামী ঋণ বন্ধ এবং অর্থ সরবরাহ কৌশলের বাস্তবায়ন।

পুবালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, ব্যাংকে আমানত বাড়ার চারটি কারণ হলো: পলিসি রেট বৃদ্ধিতে বেশি সুদের আকর্ষণ, এডিআর বেশি থাকা ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসনমূলক পদক্ষেপ এবং মার্চে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স জমা হওয়া।

অন্যদিকে, মার্চে নগদ টাকার প্রবাহে হঠাৎ বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা— যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ২৪ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা বেশি। এক মাসে এ প্রবৃদ্ধির হার ৯.১৮ শতাংশ। আগের বছরের মার্চের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৩.৪৯ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি কর ফাঁকি, অনানুষ্ঠানিক লেনদেন এবং আর্থিক খাতে আস্থার ঘাটতির প্রতিফলন। একইসঙ্গে এতে অর্থ সঞ্চালনের গতি কমে যায় এবং ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে কেনাকাটার কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত নগদ অর্থ তুলে হাতে রাখতে চায়। মোহাম্মদ আলী বলেন, এ সময় ব্যয়ের জন্য মানুষ হাতে টাকা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, যা নগদ প্রবাহ বাড়ার অন্যতম কারণ।

অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ— ব্যাংক খাতে আস্থা বাড়াতে হবে, দুর্বল ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং ডিজিটাল লেনদেনের পরিধি বাড়াতে হবে। কারণ, নগদ নির্ভরতা বাড়লে ব্যাংকিং লেনদেন ও কর প্রদানের হার কমে যায়, যার ফলে সরকার রাজস্ব হারায় এবং অর্থনীতি ফরমাল কাঠামো থেকে দূরে সরে যায়। এজন্য নগদ লেনদেন নিরুৎসাহিত করে ক্যাশবিহীন অর্থনীতির দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া জরুরি।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত