শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:১১

টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত নাজমুল তারেকের মামলা

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৮, ২০২৫ ৮:০৯ অপরাহ্ণ
টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত নাজমুল তারেকের মামলা

টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত নাজমুল তারেকের মামলা

রাজধানীর ফার্মগেটে ২০২২ সালে ঘটে যাওয়া বহুল আলোচিত ‘টিপকাণ্ড’-এর ঘটনায় তেজগাঁও কলেজের শিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দার, তার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মলয় মালা এবং শোবিজের ১৬ জন তারকাসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেক। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে এই মামলার আবেদন করেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর শেরেবাংলা নগর থানাকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী তৌহিদ খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আসামিরা
মামলায় আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে অভিনেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সুবর্ণা মোস্তফা, নাট্য অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন, সাজু খাদেম, প্রাণ রায়, সায়মন সাদিক, মনোজ প্রামাণিক, স্বাধীন খসরু, চয়নিকা চৌধুরী, আশনা হাবিব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, দেবী সান, নাজনীন নাহার চুমকি, সুষমা সরকার এবং কুসুম সিকদারসহ শোবিজের আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নাম।

মামলার অভিযোগ
নাজমুল তারেক তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, ২০২২ সালে টিপ পরা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের সময় এই আসামিরা ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশ বাহিনীর মানহানি করেছেন। তারা সামাজিক মাধ্যমে ছবি ও বক্তব্যের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন, যার ফলে তার পেশাগত ও সামাজিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনার জেরে তিনি পুলিশের চাকরি হারিয়েছেন এবং তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে।

টিপকাণ্ডের পটভূমি
২০২২ সালের ২ এপ্রিল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় একটি মোটরসাইকেল তেজগাঁও কলেজের শিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দারের পায়ে লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়। লতা সমাদ্দার অভিযোগ করেন, পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি তাকে ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে কটূক্তি করেন। এই ঘটনা তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করলে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। শোবিজের অনেক তারকা লতার পক্ষ নিয়ে টিপ পরা ছবি পোস্ট করে প্রতিবাদে অংশ নেন। এই ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এবং নারীদের ব্যক্তিগত পোশাক নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এই ঘটনার পর নাজমুল তারেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেন এবং চাকরি পুনর্বহালের জন্য আবেদন করেন। বর্তমানে তার চাকরি ফেরতের মামলা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া, তিনি পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছেও চাকরি পুনর্বহালের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন।

আইনি প্রক্রিয়া
নাজমুল তারেকের মানহানির মামলায় আদালত প্রাথমিকভাবে তার জবানবন্দি গ্রহণ করেছে এবং শেরেবাংলা নগর থানাকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। আইনজ্ঞদের মতে, এই মামলা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্য ও ছবির আইনি সীমারেখা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলবে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
টিপকাণ্ডের ঘটনা ২০২২ সালে বাংলাদেশের সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এটি নারীদের পোশাক ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পাশাপাশি পুলিশের আচরণ নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। শোবিজ তারকাদের প্রতিবাদ এই ঘটনাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছিল, তবে এটি পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তির ওপরও প্রভাব ফেলেছিল।

নাজমুল তারেকের মামলা এই ঘটনার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার অভিযোগে বলা হয়েছে, শোবিজ তারকাদের প্রতিবাদ তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের ক্ষতির জন্য দায়ী। এই মামলা সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের সীমা এবং এর আইনি পরিণতি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এবং আদালতের রায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। নাজমুল তারেকের চাকরি পুনর্বহালের আবেদন এবং মানহানির মামলা একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ায় এই বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এছাড়া, শোবিজ তারকাদের বিরুদ্ধে মামলা তাদের পাবলিক ইমেজ এবং সামাজিক মাধ্যমে তাদের ভূমিকার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের সমাজে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নিয়ে গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং তদন্তের ফলাফল এই বিতর্কের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে। 

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি