শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২৫

ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ: আশ্রয় পাওয়া হবে আরও কঠিন

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৭, ২০২৫ ৮:৫০ অপরাহ্ণ
ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ: আশ্রয় পাওয়া হবে আরও কঠিন

ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ: আশ্রয় পাওয়া হবে আরও কঠিন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশসহ সাতটি দেশকে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ইইউভুক্ত দেশগুলোতে আশ্রয় পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে, এই তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও সহজতর হবে।

ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়াও কসোভো, কলম্বিয়া, মিসর, ভারত, মরক্কো এবং তিউনিশিয়াকে এই ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে কার্যকর হতে হলে ইইউর সব সদস্য রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন।

আশ্রয় প্রক্রিয়ায় কী প্রভাব পড়বে?

ইইউর এই পদক্ষেপের ফলে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে। তালিকাভুক্ত দেশগুলোকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচনা করা হওয়ায় এসব দেশের নাগরিকদের আশ্রয় আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবেদন প্রত্যাখ্যানের সম্ভাবনা বাড়বে। এছাড়া, ইতোমধ্যে ইইউ দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হবে।

শরণার্থী বিষয়ক ইইউ কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার বলেন, “অনেক সদস্য রাষ্ট্রে প্রচুর আশ্রয় আবেদন জমা পড়ছে। আমরা এখন এই আবেদনগুলোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছি।” তিনি আরও জানান, এই পদক্ষেপ অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করবে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা

ইইউর এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। তাদের মতে, এই পদক্ষেপের ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের ন্যায্য বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে এই তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের ঝুঁকি থাকতে পারে, যা আশ্রয় আবেদনের ক্ষেত্রে বিবেচনা না করা হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বাড়বে।

কেন এই তালিকা?

ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইইউর ওপর চাপ বেড়েছে। স্থানীয় জনগণের একাংশের মতে, অভিবাসনের কারণে ইউরোপে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতির প্রভাব বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং আশ্রয় নীতি কঠোর করার জন্য ইইউ এই তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

ইইউ আরও জানিয়েছে, সদস্যপদের জন্য আবেদন করা দেশগুলোকেও নীতিগতভাবে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবে, তালিকাভুক্ত দেশগুলোর পরিস্থিতি সময়ে সময়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজনে তালিকা হালনাগাদ করা হবে। এছাড়া, ইইউর সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজস্ব বিবেচনায় অন্য দেশগুলোকেও নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে, তবে এই সাতটি দেশের তালিকা থেকে কোনো দেশ বাদ দেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার এই সিদ্ধান্ত দেশটির নাগরিকদের জন্য ইউরোপে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনাকে আরও জটিল করে তুলবে। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হলেও এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেকের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

ইইউর এই পদক্ষেপ অভিবাসন নীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করলেও, এর ফলে মানবাধিকার এবং আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: ফ্রান্স২৪

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি