জাতিসংঘের রিপোর্টে অনিশ্চিত আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দলের প্রকাশিত প্রতিবেদন ঘিরে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠে আসার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আগামী অক্টোবরের মধ্যেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ১০৮টি হত্যা মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি ট্রাইব্যুনালে গিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তার দাবি, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে।
৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে। তারা বলছে, শেখ হাসিনার রাজনীতিতে পুনর্বাসন সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে এবং বুধবার ঢাকায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পর শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সন্ত্রাসী এবং তার দল আওয়ামী লীগও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অপরদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন দাবি করেন, শেখ হাসিনার দল গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাই শুধু নিষিদ্ধ করাই যথেষ্ট নয়, তাদের বিচারও প্রয়োজন।
তবে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, এখনই আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না। তার মতে, আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান নির্ভর করবে দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার ওপর।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তার মতে, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, ফলে রাজনীতিতে তাদের ভবিষ্যৎ নেই।
অন্যদিকে, সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল মনে করেন, আওয়ামী লীগের জন্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা শেখ হাসিনা। তার মতে, দলটি যদি শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে পুনর্গঠিত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো অবস্থানে যেতে পারে। তবে, তাকে সঙ্গে নিয়ে এগোলে আরও গভীর সংকটে পড়বে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে কোনো দল নিষিদ্ধ করার সুপারিশ না থাকলেও, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এত বেশি অপকর্মে জড়িত যে, তাদের পক্ষে রাজনীতিতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা দেশের বাইরে বসে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা তার দলের প্রতি জনরোষ আরও বাড়িয়ে তুলছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে, সে বিষয়ে বিশ্লেষকরা একমত। তবে, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে দলটি নিজেকে কীভাবে পুনর্গঠিত করে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে অগ্রসর হয়, তার ওপর।