সৌদি আরব ভারতীয়দের বেসরকারি হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল
সৌদি আরব ভারতীয় মুসলিমদের জন্য বেসরকারি হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১২ এপ্রিল এই পদক্ষেপ কার্যকর করা হয়েছে, যার ফলে চলতি বছর হাজার হাজার ভারতীয় হজযাত্রীর পবিত্র হজ পালন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এই সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
ওমর আব্দুল্লাহ রোববার (১৩ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেন, “সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে ৫২ হাজারেরও বেশি ভারতীয় মুসলিমের এবারের হজযাত্রা গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এই হজযাত্রীরা ইতিমধ্যে হজের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের খরচ পরিশোধ করে ফেলেছেন।” তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই ইস্যুতে দ্রুত সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
মেহবুবা মুফতিও একইভাবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “হজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই সিদ্ধান্ত হাজার হাজার ভারতীয় মুসলিমের ধর্মীয় অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে। ভারত সরকারের উচিত এই বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া।”
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি, যা প্রত্যেক স্বচ্ছল মুসলিমের জন্য জীবনে অন্তত একবার পালন করা ফরজ। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলিম সৌদি আরবে হজ পালনের জন্য যান। ভারত থেকেও প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মুসলিম এই পবিত্র যাত্রায় অংশ নেন। সৌদি সরকার ভারতীয় হজযাত্রীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের কোটা বরাদ্দ করে থাকে। তবে এবার শুধু বেসরকারি কোটাই কমানো হয়েছে, সরকারি কোটায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
কেন সৌদি আরব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। নয়াদিল্লি এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, তাও অজানা।
এই সিদ্ধান্ত ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, যারা বেসরকারি কোটার আওতায় হজের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তাদের পরিকল্পনা এখন ধাক্কা খেয়েছে। হজযাত্রীদের একটি বড় অংশ বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে হজে যান, কারণ এটি তাদের জন্য তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক। কোটা কমানোর ফলে এই ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল অনেকের হজ পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ইস্যু নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। অনেকে ভারত সরকারের কাছে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তের পেছনে সম্ভাব্য রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কারণ খুঁজছেন। তবে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা না পাওয়ায় হতাশা আরও বাড়ছে।
ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় আশা করছে, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট দ্রুত সমাধান হবে। অন্যথায়, এই সিদ্ধান্ত ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। সৌদি আরব এবং ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই ইস্যু সমাধানে উভয় পক্ষের সদিচ্ছা কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: মিন্ট, হিন্দুস্তান টাইমস