ইরাকে তীব্র ধূলিঝড়ে হাজারো মানুষ অসুস্থ, দুটি বিমানবন্দর বন্ধ
ইরাকে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানা একটি তীব্র ধূলিঝড়ে কমপক্ষে এক হাজারেরও বেশি মানুষ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই ঝড়ের কারণে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নাজাফ ও বসরার দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ইরাকের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধূলিঝড়ের ফলে সৃষ্ট কমলা রঙের ধুলোর মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল। এই ঝড়ে দৃশ্যমানতা এক কিলোমিটারেরও নিচে নেমে গেছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মুথান্না প্রদেশে একা ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া নাজাফে ২৫০ জনের বেশি, দিবানিয়া প্রদেশে ৩২২ জন এবং ধি কার ও বসরা প্রদেশে ৫৩০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরাকের বিভিন্ন শহর কমলা রঙের ধুলোর চাদরে ঢেকে গেছে। রাস্তাঘাটে দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি, এবং মানুষ মুখে মাস্ক পরে চলাফেরা করছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ঝড়ের তীব্রতার কারণে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ধূলিঝড়ের প্রভাবে নাজাফ ও বসরার বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই দুই বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল সম্পূর্ণ স্থগিত রয়েছে, এবং যাত্রীরা বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল নাগাদ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ঝড়ের কারণে সৃষ্ট ধুলো এখনো বাতাসে ভাসছে, যা শ্বাসকষ্টের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ইরাকে ধূলিঝড় কোনো নতুন ঘটনা নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঝড়ের তীব্রতা এবং ঘনত্ব ক্রমশ বাড়ছে। ইরাকের পরিবেশ মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে দেশটিতে আরও বেশি সংখ্যক “ধূলিময় দিন” দেখা যেতে পারে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি দেশের মধ্যে ইরাক অন্যতম। দেশটি নিয়মিত তীব্র তাপপ্রবাহ, পানির সংকট এবং ধূলিঝড়ের মুখোমুখি হচ্ছে।
২০২২ সালে ইরাকে একটি ভয়াবহ ধূলিঝড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছিল এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এবারের ঝড়ে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি, তবে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, শিশু এবং বয়স্করা এই ধুলোর প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ইরাক সরকার জনগণকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এবং নিরাপত্তা কর্মীরা ধুলোর মধ্যে টহল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ধূলিঝড়ের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় থমকে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্রমবর্ধমান প্রভাব ইরাকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূলিঝড় মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। এছাড়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া ইরাকের মতো দেশগুলোর পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
ইরাকের জনগণ এখন আবহাওয়ার উন্নতির অপেক্ষায়। তবে এই ঝড় শুধু শারীরিক ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকির একটি স্পষ্ট সতর্কতা।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি