চুইংগামে লুকানো বিপদ: এক ঘণ্টায় শরীরে ঢুকছে লাখো মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা
জগিংয়ে বের হওয়ার সময় কিংবা অবসরে অনেকেই মুখে পুরে নেন চুইংগাম। মানসিক চাপ কমানো বা সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবেও জনপ্রিয় এই গাম। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এই অভ্যাস হতে পারে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। জার্নাল অব হ্যাজার্ডাস ম্যাটেরিয়ালস-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র এক ঘণ্টা চুইংগাম চিবোলে শরীরে প্রবেশ করতে পারে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা।
গবেষকরা পরীক্ষামূলকভাবে চুইংগাম এক ঘণ্টা চিবানোর পর অংশগ্রহণকারীদের লালায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বিশ্লেষণ করেন। ফলাফল ছিল উদ্বেগজনক। গবেষণায় উঠে এসেছে, এই একটি টুকরো গাম থেকেই লালায় জমা হয়েছে বিপুলসংখ্যক মাইক্রোপ্লাস্টিক। যেখানে আগে পানি, খাবার বা বাতাসকে এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার প্রধান উৎস বলে ধরা হতো, সেখানে এবার প্রথমবারের মতো চুইংগামকেও যুক্ত করা হলো সেই তালিকায়।
মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো পাঁচ মিলিমিটারের কম ব্যাসের প্লাস্টিক টুকরো, যা বড় প্লাস্টিকের বস্তু ভেঙে তৈরি হয়। এসব কণা সময়ের সাথে আরও ক্ষুদ্র আকারে, ন্যানোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যেগুলো মানুষের জৈব টিস্যুর মধ্যেও প্রবেশ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ন্যানোপ্লাস্টিক কণাগুলো পরীক্ষাকৃত ব্যক্তিদের লালায়ও পাওয়া গেছে।
এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলোর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন প্রবলভাবে চিন্তিত। কারণ এগুলো শুধু মুখে থেকেই ক্ষতি করে না—এর প্রভাব দেখা গেছে রক্ত, ফুসফুস এবং এমনকি গর্ভবতী নারীর প্লাসেন্টাতেও। বিষাক্ত রাসায়নিকবাহী এসব কণা শরীরে প্রবেশ করে সৃষ্টি করতে পারে প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং হজম বা বিপাকের গোলযোগ। দীর্ঘমেয়াদে এসব কণা হতে পারে নানা ধরনের অসুস্থতার কারণ।
এই গবেষণার ফলাফল নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে চুইংগাম গ্রহণের অভ্যাস সম্পর্কে। অনেকের কাছে সামান্য এক অভ্যাস হলেও এর ক্ষতিকর দিক হতে পারে নীরব এক স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই সচেতন হওয়ার এখনই সময়।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া