বৃহস্পতিবার, ৫ই জুন, ২০২৫| বিকাল ৪:১৩

গাজার পুরো রাফা দখল করল ইসরায়েল

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৩, ২০২৫ ৭:২৭ অপরাহ্ণ
গাজার পুরো রাফা দখল করল ইসরায়েল

গাজার পুরো রাফা দখল করল ইসরায়েল

ইসরায়েল গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাকে পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল, ২০২৫) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী মোরাগ করিডর সম্পূর্ণভাবে দখল করেছে। এর ফলে রাফা গাজার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এই অঞ্চলকে এখন ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে রাফা, যা মিসর সীমান্তের কাছে অবস্থিত, ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনী ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে রাফাকে নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর আগে গাজার ফিলাডেলফি করিডর, যা মিসর সীমান্ত বরাবর অবস্থিত, ইসরায়েলের দখলে ছিল। নতুন মোরাগ করিডর তৈরির মাধ্যমে রাফাকে খান ইউনিস থেকে আলাদা করা হয়েছে। এই করিডরে নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজও সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি প্রকৌশল বাহিনী।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ শনিবার বলেছেন, “রাফা এখন ইসরায়েলের নিরাপত্তা অঞ্চল। এখানে ফিলিস্তিনিদের থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না।” তিনি গাজার বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেন, “হামাসকে নির্মূল করা এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করাই এখন যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র পথ। এটি আপনাদের শেষ সুযোগ। যদি এই সুযোগ কাজে না লাগান, তাহলে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজার অধিকাংশ এলাকায় তীব্র হামলা শুরু করবে। আপনাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যেতে হবে।”

কাতজ আরও বলেন, হামাস গাজার মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, হামাস নেতারা নিজেদের পরিবার নিয়ে সুরক্ষিত সুড়ঙ্গে লুকিয়ে আছে, আর বিদেশে থাকা নেতারা বিলাসবহুল হোটেলে থেকে বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে জীবনযাপন করছে। তিনি গাজাবাসীদের হামাসের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

এছাড়া, কাতজ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের আলোকে গাজার যেসব বাসিন্দা স্বেচ্ছায় অন্য দেশে চলে যেতে চান, তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে। তবে, এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ গাজার মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। রাফা ছিল গাজার শেষ আশ্রয়স্থল, যেখানে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল। মোরাগ করিডর দখলের ফলে গাজার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এবং ত্রাণ সরবরাহ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের দাবি, এই অভিযানের লক্ষ্য হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস করা এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা। তবে, ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি গাজার জনগণকে আরও কোণঠাসা করার কৌশল। রাফার দখল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা বাড়ছে, এবং এর ফলে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

সূত্র: রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি