বুধবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২২

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় সারাদেশে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৮, ২০২৫ ৭:১৪ অপরাহ্ণ
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় সারাদেশে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় সারাদেশে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে ডাকা হরতালের সমর্থনে বাংলাদেশে বিক্ষোভের নামে একদল দুর্বৃত্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাটা ও কেএফসির শোরুমে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৪৯ জনকে আটক করেছে।

এই ঘটনাগুলোর পেছনে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সিলেট, গাজীপুর ও খুলনায় সোমবার (৭ এপ্রিল) রাত থেকে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি রেকর্ডিং আর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দৃশ্য বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে।

সিলেট নগরীতে বিক্ষোভের মধ্যে তৌহিদী জনতার ভিড়ে একদল দুষ্কৃতিকারী কেএফসি ও বাটার শোরুমে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। দোকানের মালামাল লুট করে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ সোমবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন—সুনামগঞ্জের দিরাই থানার রাজা মিয়ার ছেলে মো. রাজন, সদর থানার হাছানগরের আরব আলীর ছেলে ইমন এবং নগরের কাজিটুলার দ্বীন ইসলামের ছেলে মো. রাকিব। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করেছি। এই ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”

গাজীপুরে বাটা শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় যৌথবাহিনী তৎপর হয়ে উঠেছে। সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করা হয়। তাদের গাছা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। আটকদের মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হবে।

খুলনায় পরিস্থিতি ছিল আরও উত্তপ্ত। বাটা শোরুম ও কেএফসি ফুড কোর্টে লুটপাটের ঘটনায় ৩১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিক্ষোভের আড়ালে দুষ্কৃতিকারীরা এসব প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে। পুলিশের একাধিক টিম সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের ধরতে তৎপর হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা এখনো ধরা পড়েনি, তাদের শনাক্ত করতে অভিযান চলছে। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এটা শুধু সম্পত্তির ক্ষতি নয়, দেশের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।”

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী হরতালের ডাক দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এর সমর্থনে বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্তু এই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কিছু দুর্বৃত্ত ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের নামে বাটা ও কেএফসির শোরুমে হামলা চালায়। তারা দোকানের জানালা ভেঙে, মালামাল লুট করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।

এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। একজন ব্যবসায়ী বলেন, “বিক্ষোভ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু এভাবে লুটপাট কেন? এতে কার লাভ?” অনেকে মনে করছেন, এটা প্রকৃত আন্দোলনের আড়ালে অপরাধীদের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা।

পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও জড়িতদের ধরতে তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান ত্বরান্বিত করা হয়েছে। “আমরা শান্তি ফিরিয়ে আনব। যারা এসব করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে,” বলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি