শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:১২

পাবনা আদালতে পুলিশ সদস্যকে মারধরের অভিযোগে বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৬, ২০২৫ ৭:১৬ অপরাহ্ণ
পাবনা আদালতে পুলিশ সদস্যকে মারধরের অভিযোগে বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক

পাবনা আদালতে পুলিশ সদস্যকে মারধরের অভিযোগে বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক

পাবনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানি চলাকালে এজলাসে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্যকে মারধরের অভিযোগে বিএনপির ছয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, আটক ব্যক্তিরা এজলাসে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করছিলেন, এবং পুলিশ সদস্য তাদের বাধা দেওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালান।

আটককৃতরা হলেন: ঈশ্বরদী সদরের ফতে মোহাম্মদপুর নিউ কলোনি এলাকার মৃত আব্দুল ওহাবের ছেলে আওয়াল কবির (৩৮), হাবিবুর রহমানের ছেলে সরোয়ার জাহান শিশির (৩৩), দাশুড়িয়া গ্রামের মৃত আমজাদ খানের ছেলে কালাম খান (৪০), এম এস কলোনি এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে রুবেল হোসেন (৩৩), লোকসেড গাউছিয়া মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে সবুজ হোসেন (৩৫) এবং ভাঁড়ইমারী বাঁশেরবাদা গ্রামের মৃত আব্দুল গাফফার সরদারের ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৫)।

আটকদের মধ্যে আওয়াল কবির ঈশ্বরদী পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক, সরোয়ার জাহান শিশির পৌর ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রত্যাশী, কালাম খান দাশুড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রুবেল হোসেন পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জহুরুল ইসলাম সলিমপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য।

ঘটনার বিবরণ

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলার শুনানি চলাকালে। আটককৃতরা ওই মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। শুনানির সময় তারা এজলাসে দাঁড়িয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য শাহ আলম তাদের এই কার্যক্রমে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আটককৃতরা শাহ আলমের উপর হামলা চালান এবং তাকে মারধর করেন।

ঘটনার সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা দ্রুত এগিয়ে এসে শাহ আলমকে উদ্ধার করেন। আহত অবস্থায় তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুনানি শেষে পুলিশ আটককৃত ছয়জনকে হেফাজতে নেয়।

পরিদর্শক (কোর্ট ইন্সপেক্টর) রাশেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ঘটনার পরপরই ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”

বিএনপি ও আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া

পাবনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আইনজীবী মাসুদ খন্দকার ঘটনাটিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, “আদালতের এজলাসে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি বিএনপির কোনো নেতাকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং এটি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি করছি।”

স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তারা ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন। তবে তারা এও বলেছেন, আদালতের মতো একটি সম্মানজনক স্থানে এ ধরনের আচরণ দলের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।

ঘটনার পটভূমি

ঈশ্বরদীতে ২০২৩ সালের নভেম্বরে রাজনৈতিক নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি স্থানীয়ভাবে বেশ আলোচিত। ওই মামলায় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযুক্ত রয়েছেন। মঙ্গলবারের শুনানিতে আটককৃতরা হাজিরা দিতে এসেছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুনানির সময় আদালতের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং ভিডিও ধারণের বিষয়টি উত্তেজনার সূত্রপাত করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পুলিশ সদস্য শাহ আলম যখন ছবি ও ভিডিও ধারণে বাধা দেন, তখন তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, এবং হামলার ঘটনা ঘটে। আদালতের এজলাসে এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল, এবং এটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আইনি প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্য প্রভাব

পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আহত পুলিশ সদস্য শাহ আলমের চিকিৎসা চলছে, এবং তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

এই ঘটনা পাবনার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগে দলটির স্থানীয় ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আদালতের মতো একটি সম্মানজনক জায়গায় এ ধরনের ঘটনা শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

আইনজীবী মহল থেকে অনেকে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আদালতের পবিত্রতা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। এই ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবিও উঠেছে।

পাবনা আদালতে পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনা স্থানীয়ভাবে শুধু আলোচনাই নয়, আইনশৃঙ্খলার প্রতি মানুষের আস্থার প্রশ্নও তুলেছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে, এবং তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই ঘটনা বিএনপি এবং স্থানীয় সমাজের জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি