মহেশপুরে বাংলাদেশী যুবককে পিটিয়ে মারলো বিএসএফ
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পলিয়ানপুর সীমান্তে ওয়াসিম নামে এক বাংলাদেশি যুবককে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হত্যার পর তার মরদেহ ইছামতী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে শুক্রবার (১১ এপ্রিল), যখন ইছামতী নদীতে একটি মরদেহ ভেসে ওঠে। মরদেহটি বাঘাডাঙ্গা গ্রামের বুনোপাড়ার ওয়াসিমের বলে প্রথম থেকেই সন্দেহ করছিল তার পরিবার। নিহত ওয়াসিম ওই গ্রামের রমজান আলীর ছেলে। পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, গত চার দিন ধরে ওয়াসিমের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
বাঘাডাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য ওবাইদুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুরে হুদাপাড়া গ্রামের একজন কৃষক মাঠে যাওয়ার পথে নদীতে মরদেহ ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহের বিষয়টি নিশ্চিত করে। ওয়াসিমের সঙ্গে সীমান্তে যাওয়া সলেমানপুর গ্রামের আব্দুস সোবহান, কাঞ্চনপুর গ্রামের রাজু, শাবুদ্দিন, মানিক এবং বাঘাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদের সঙ্গে কথা হলে তারা মরদেহটি ওয়াসিমের বলে নিশ্চিত করেন।
ওয়াসিমের বড় ভাই মেহেদী হাসান বলেন, “ওয়াসিম গত তিন-চার দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। আমরা জানতে পেরেছি, সে মাঝেমধ্যে ধূর পাচারের জন্য ভারতে যেত। গত ৮ এপ্রিল ওয়াসিমসহ কয়েকজন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যায়। ফেরার সময় বিএসএফ তাদের ধাওয়া করে। অন্যরা পালিয়ে আসতে পারলেও ওয়াসিম ধরা পড়ে। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, মরদেহটি দেখে তাদের ধারণা, ওয়াসিমকে নির্যাতনের পর নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে খালিশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম জানান, মরদেহটি ইছামতী নদীর ভারতীয় অংশে থাকায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে মরদেহটি বাংলাদেশি না ভারতীয়, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কোনো পরিবারও তাদের সদস্য নিখোঁজ থাকার বিষয়ে আমাদের জানায়নি।”
মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফয়েজ উদ্দিন মৃধা জানান, ইছামতী নদীর ভারতীয় অংশে মরদেহটি পাওয়া গেছে। যেহেতু এটি সীমান্তের বিষয়, তাই বিজিবি এই ঘটনার তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, “বিজিবি বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।”
এই ঘটনা সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর বিএসএফের নির্যাতনের বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে। ওয়াসিমের পরিবার ও স্থানীয়রা এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন। সীমান্তে এমন ঘটনা রোধে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো হয়েছে।