শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| দুপুর ১:৪৭

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের চিঠি

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৮, ২০২৫ ৭:১২ অপরাহ্ণ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের চিঠি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের চিঠি

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পাঠিয়েছেন। এই চিঠিতে তিনি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর সম্প্রতি আরোপিত শুল্ক পুনর্বিবেচনা করে তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল ২০২৫) এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

চিঠিতে ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ সবসময় দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, এই শুল্ক স্থগিত করা হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ কমবে এবং দুই দেশের বাণিজ্য আরও সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাবে।

এর আগে রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির প্রভাব মোকাবিলায় দুটি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম চিঠিটি ড. ইউনূস সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠাবেন। দ্বিতীয় চিঠিটি বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির অফিসে (ইউএসটিআর) পাঠাবেন। শফিকুল আলম আরও বলেন, “আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই চিঠি দুটি পাঠানো হবে। আমরা আশা করছি, এতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে।”

এই চিঠির পেছনে একটি বড় কারণ রয়েছে। গত ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে, বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি মার্কিন বাজারের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এই শুল্কের ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

ড. ইউনূসের চিঠিতে তিনি এই বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, “এই শুল্ক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। তিন মাস শুল্ক স্থগিত করলে আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে পারব।” তিনি আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের জন্যই উপকারী হবে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতারাও এই চিঠিকে স্বাগত জানিয়েছেন। একজন পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, “এই শুল্ক আমাদের ব্যবসা ধ্বংস করে দেবে। ড. ইউনূসের এই পদক্ষেপে আমরা আশার আলো দেখছি।” তবে অনেকে শঙ্কিত, ট্রাম্প এই অনুরোধে সাড়া দেবেন কি না। একজন বিশ্লেষক বলেন, “ট্রাম্পের নীতি খুবই কঠোর। তবে ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি এখানে কাজে আসতে পারে।”

মার্কিন শুল্ক নীতির প্রভাব শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ববাজারে এর ঢেউ লেগেছে। ট্রাম্পের ঘোষণার পর শেয়ারবাজারে পতন দেখা গেছে। বাংলাদেশের জন্য এই শুল্ক বিশেষভাবে ক্ষতিকর, কারণ যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। গত বছরই এই খাত থেকে বাংলাদেশ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

চিঠিতে ড. ইউনূস সময় চেয়েছেন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। তিনি লিখেছেন, “এই তিন মাস আমাদের ব্যবসায়ীদের নতুন পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। আমরা চাই না এই শুল্ক আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাক।” প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “এই চিঠি আমাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার একটি পদক্ষেপ। আমরা আশাবাদী।”

এদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দীনের চিঠিতে ইউএসটিআর-এর কাছে বাংলাদেশের অবস্থান বোঝানো হবে। তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাই।”

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত