শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:১৪

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদে নামছে বিরোধীরা

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৪:২৬ অপরাহ্ণ
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদে নামছে বিরোধীরা

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদে নামছে বিরোধীরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেছেন, আর এবার তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিরোধীদের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়তে যাচ্ছে। শনিবার (৫ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে প্রায় ১২০০টি প্রতিবাদের আয়োজন করেছে ট্রাম্প ও তার ধনকুবের মিত্র ইলন মাস্কের বিরোধীরা। এই বিক্ষোভ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, মেক্সিকো এবং পর্তুগালেও এর ছোঁয়া লাগবে।

ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে দেশের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। এই পদক্ষেপগুলো অনেকের কাছে বিতর্কিত। তার বিরোধীরা মনে করেন, এটি তাদের গণতন্ত্র, সমাজ ও জীবনযাত্রার ওপর আঘাত। আর এই ক্ষোভ প্রকাশের জন্য তারা শনিবারের ‘হ্যান্ডস অফ!’ প্রতিবাদকে বেছে নিয়েছে। সংগঠকদের প্রত্যাশা, এটি একক দিনে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে পরিণত হবে।

এই প্রতিবাদের অন্যতম সংগঠক গোষ্ঠী ‘ইন্ডিভিসিবল’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, “এটা কেবল একটি বিক্ষোভ নয়, এটা একটা বিশাল জনজোয়ার। আমরা ট্রাম্প, মাস্ক, কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের এবং তাদের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ সমর্থকদের কাছে পরিষ্কার বার্তা পাঠাতে চাই। আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের স্কুল, আমাদের সমাজ, আমাদের বন্ধু আর প্রতিবেশীদের ওপর তাদের হাত আমরা মেনে নেব না।” লেভিনের কথায় জনগণের মধ্যে জমে থাকা অসন্তোষের গভীরতা ফুটে উঠেছে।

এই আন্দোলনে প্রায় ১৫০টি গোষ্ঠী অংশ নিচ্ছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে এই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, বিদেশের মাটিতেও ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে রাস্তায় নামবেন অনেকে। এটি ট্রাম্পের শাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অসন্তোষের একটি প্রতিফলন।

ট্রাম্পের নীতির মধ্যে অভিবাসন নিয়ে কঠোর অবস্থান, পরিবেশ নীতিতে পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যসেবায় হস্তক্ষেপ অন্যতম। এসব পদক্ষেপে অনেক আমেরিকান নাগরিক উদ্বিগ্ন। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “ট্রাম্প আর মাস্ক যেন আমাদের জীবনের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য চালাতে চান। আমরা এটা মানব না।”

রয়টার্স ট্রাম্প ও মাস্কের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউজ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ট্রাম্পের সমর্থকরা অবশ্য এই বিক্ষোভকে ‘বামপন্থীদের ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। একজন সমর্থক বলেন, “ট্রাম্প আমেরিকাকে শক্তিশালী করছেন। এই বিক্ষোভকারীরা শুধু বাধা দিতে চায়।”

শনিবারের এই প্রতিবাদে নারী, শিক্ষার্থী, শ্রমিক এবং পরিবেশবাদীদের বড় অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভের জমায়েত হবে বিশাল। একজন সংগঠক বলেন, “আমরা রাস্তায় নামছি যাতে সরকার বুঝতে পারে, জনগণের কথা উপেক্ষা করা যাবে না।”

এই বিক্ষোভ কেবল ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে নয়, ইলন মাস্কের প্রভাব নিয়েও। অনেকে মনে করেন, মাস্কের অর্থ ও প্রযুক্তির শক্তি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “এটা গণতন্ত্র নয়, এটা ধনকুবেরদের শাসন।”

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর থেকে বিরোধীরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু শনিবারের এই আয়োজন তার সবচেয়ে বড় রূপ নিতে যাচ্ছে। এটি শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রাম্পের নীতির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। লন্ডনে একজন প্রতিবাদকারী বলেন, “ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আমাদেরও স্পর্শ করে। আমরা চুপ থাকব না।”

প্রতিবাদের এই ঢেউ ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পুলিশ প্রশাসন ইতোমধ্যে নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হবে, নাকি উত্তেজনা ছড়াবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে একটা কথা পরিষ্কার—ট্রাম্পের বিরোধীরা তাদের কণ্ঠস্বর জোরালোভাবে তুলে ধরতে প্রস্তুত।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত