বুধবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫| বিকাল ৩:০৫

৭ দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাপুয়া নিউগিনি

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৪:০৫ অপরাহ্ণ
৭ দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাপুয়া নিউগিনি

৭ দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাপুয়া নিউগিনি

প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। শনিবার ভোর ৬টা ৪ মিনিটে স্থানীয় সময়ে এই কম্পন অনুভূত হয়, যখন দেশটির বেশিরভাগ মানুষ গভীর ঘুমে ছিলেন।

ইউরোপভিত্তিক ভূমিকম্প গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান-মেডিটেরেনিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ ও গবেষণা সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, এটি ছিল ৬ দশমিক ৯। মাত্রার এই সামান্য পার্থক্য থাকলেও দুই সংস্থাই একমত যে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বা এপিসেন্টার ছিল পাপুয়া নিউগিনির ওয়েস্ট নিউ ব্রিটেন প্রদেশের রাজধানী কিম্বে শহর থেকে ১৯৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। এটি পোমিও জেলায় ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে অবস্থিত ছিল। এত কম গভীরতার কারণে কম্পনের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়েছে।

প্রথম ধাক্কার পর পরবর্তী ৩০ মিনিটে অন্তত চারটি আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩। এই ধারাবাহিক কম্পন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভূমিকম্পের পর ইউএসজিএস সুনামির সতর্কতা জারি করেছিল। তবে পরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেই সতর্কতা প্রত্যাহার করা হয়। সুনামির আশঙ্কা না থাকলেও এলাকার বাসিন্দারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেননি।

এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে হতাহত বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে এপিসেন্টারের কাছাকাছি পোমিও জেলার বাসিন্দা রাফায়েল সিসলেরিয়া এএফপিকে বলেছেন, “ভূমিকম্পের সময় আমরা গভীর ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ কম্পন শুরু হতেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসে।” রাফায়েল সমুদ্র উপকূলের কাছে একটি রিসোর্ট পরিচালনা করেন। তিনি আরও বলেন, “সবাই খুব ভয় পেয়েছিল। তবে এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরা এখনো কোনো হতাহতের খবর পাইনি।”

পাপুয়া নিউগিনিতে ভূমিকম্প কোনো নতুন ঘটনা নয়। দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’ নামে পরিচিত আগ্নেয় মেখলায় অবস্থিত। এই অঞ্চলে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। তবে ৭ দশমিক ১ মাত্রার এমন শক্তিশালী কম্পন বিরল। স্থানীয়রা বলছেন, “এত জোরে কাঁপতে আমরা খুব কমই দেখেছি।”

পোমিও জেলা উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত। এখানে অনেকেই মাছ ধরে ও পর্যটনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। রাফায়েল বলেন, “কম্পনের সময় সমুদ্রের পানি কিছুটা অস্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। আমরা সুনামির ভয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন সব ঠিক আছে।” তিনি জানান, তাদের রিসোর্টে বড় ক্ষতি হয়নি, তবে কিছু জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে।

ইএমএসসি ও ইউএসজিএস-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভূমিকম্পের গভীরতা কম হওয়ায় এর প্রভাব বেশি অনুভূত হয়েছে। তবে এপিসেন্টারটি জনবসতি থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা কম। স্থানীয় প্রশাসন এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ শুরু করেছে।

পাপুয়া নিউগিনির ভূমিকম্পপ্রবণ অবস্থান এটিকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ করে তুলেছে। ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে বছরে শত শত কম্পন হয়, যার বেশিরভাগই ছোট মাত্রার। কিন্তু এবারের মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প স্থানীয়দের মনে ভয়ের ছাপ ফেলে। একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকি, কিন্তু প্রতিবারই এটা ভয়ের।”

ভূমিকম্পের পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তারা আফটারশকের সম্ভাবনা নিয়ে নজর রাখছে। রয়টার্স ও এবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনা পাপুয়া নিউগিনির মানুষের জন্য একটি বড় পরীক্ষা ছিল। তবে সুনামির আশঙ্কা কেটে যাওয়ায় এবং হতাহতের খবর না পাওয়ায় সবাই এখন একটু হলেও স্বস্তিতে।

এই ভূমিকম্পের প্রভাব আরও কতটা হতে পারে, তা জানতে বিজ্ঞানীরা এখন তথ্য বিশ্লেষণ করছেন। পাপুয়া নিউগিনির এই অভিজ্ঞতা আবারও প্রমাণ করল, প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা অসহায়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত