বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের নাম বদলে শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ
ঢাকার গুলশানে অবস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ’র নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ’ করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে ২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার রাতে। স্থানীয় সূত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, একদল ব্যক্তি রাতের আঁধারে সড়কটির নামফলক ভেঙে ফেলে এবং নতুন করে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ’ লেখা একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আবরার ফাহাদ ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন শিক্ষার্থী, যিনি ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তির বিরোধিতা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে তাকে শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যু সারাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। এই ঘটনার পর আবরারকে অনেকে ‘শহীদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তার নামে বিভিন্ন স্থানের নামকরণের দাবি উঠে আসে।
নাম পরিবর্তনের ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ পায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ২০-২৫ জনের একটি দল ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ’র সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে এবং নতুন সাইনবোর্ড বসায়। এই দলে যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে, যদিও বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, কিন্তু ততক্ষণে দলটি চলে যায়। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, তার নাম মুছে ফেলা যায় না। এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ।” অন্যদিকে, বিএনপির একাংশ এই উদ্যোগকে সমর্থন করে বলেছে, “আবরার ফাহাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তার নামে সড়কের নামকরণ একটি সম্মানজনক সিদ্ধান্ত।” সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, “যতই নাম বদলাও, বাঙালির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছতে পারবে না।” আবার অনেকে আবরারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর আগে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজার নামও পরিবর্তন করে ‘জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) এক্সপ্রেসওয়ে’ করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ’র নাম পরিবর্তনকে অনেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন।
এদিকে, আবরার ফাহাদের পরিবার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা পূর্বে ছেলের হত্যার ন্যায়বিচার ও তার স্মৃতি রক্ষার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। ২০২৫ সালের ৩ মার্চ আবরারকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়ার ঘোষণা আসে, যা তার প্রতি জাতির শ্রদ্ধার প্রতীক। এই নামকরণকে অনেকে সেই শ্রদ্ধারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন।
এই ঘটনা আগামী দিনে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতির প্রতীকী স্থানগুলো নিয়ে বিতর্ক থামছে না।