শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২২

সিরিয়া-ইসরায়েল উত্তেজনা, সংঘাতে না জড়ানোর ঘোষণা তুরস্কের

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৪:০৩ অপরাহ্ণ
সিরিয়া-ইসরায়েল উত্তেজনা, সংঘাতে না জড়ানোর ঘোষণা তুরস্কের

সিরিয়া-ইসরায়েল উত্তেজনা, সংঘাতে না জড়ানোর ঘোষণা তুরস্কের

সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যখন মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, তখন তুরস্ক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই সংঘাতে জড়াতে চায় না। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা সিরিয়া বা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাতে যেতে চাই না। সিরিয়া হলো সিরিয়ার জনগণের দেশ। এটা তুরস্ক বা ইসরায়েলের বিষয় নয়।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তুরস্ক একটি সংযত ও নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পর থেকে দেশটির পরিস্থিতি বদলেছে। এই শূন্যতার মধ্যে ইসরায়েল সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলোকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাতের সূচনা করতে পারে। তবে তুরস্ক এই পরিস্থিতিতে নিজেকে যুদ্ধের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হাকান ফিদান তার সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, “সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে সিরিয়ার জনগণ। তারা যদি চায়, বাইরের কোনো দেশের সাহায্য নিতে পারে। আবার ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে চাইলেও সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আমরা এতে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।” এই বক্তব্যে তিনি সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন এবং তুরস্কের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কথা জোর দিয়েছেন।

তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনীতিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। গত এক দশকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে লাখ লাখ শরণার্থী তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তুরস্ক সিরিয়ার বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর ঝুঁকি নিতে চায় না।

ইসরায়েলের হামলা সিরিয়ার পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে, যারা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কিন্তু এই হামলা আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তুরস্কের নিরপেক্ষ অবস্থান অনেকের কাছে উল্লেখযোগ্য।

হাকান ফিদানের বক্তব্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই না এই অঞ্চল আরও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক। সিরিয়ার জনগণের জন্য শান্তি ফিরে আসুক, এটাই আমাদের কামনা।” তুরস্কের এই অবস্থানকে অনেক বিশ্লেষক প্রশংসা করেছেন। একজন বিশ্লেষক বলেন, “তুরস্ক বুঝতে পারছে, সংঘাতে জড়ালে এর প্রভাব তাদের ওপরও পড়বে। তারা সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।”

তুরস্কের ইতিহাসে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তুরস্ক বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছে এবং সামরিক অভিযানও চালিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি মুখোমুখি হওয়া তুরস্কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই তারা এবার পিছিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিরিয়ার জনগণ এখন এক কঠিন সময় পার করছে। আসাদের পতনের পর দেশটিতে ক্ষমতার লড়াই চলছে। ইসরায়েলের হামলা এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। এমন অবস্থায় তুরস্কের এই ঘোষণা সিরিয়ার জনগণের জন্য কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন সিরিয়ার নাগরিক বলেন, “আমরা চাই শান্তি ফিরে আসুক। কিন্তু ইসরায়েলের হামলা বন্ধ না হলে তা কঠিন।”

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, তারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করতে চায়। তিনি বলেন, “আমরা সিরিয়ার জনগণকে সাহায্য করতে প্রস্তুত, কিন্তু যুদ্ধে জড়িয়ে নয়।”

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি