শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:০৯

গণহত্যার দায়ে আ. লীগকে বিচারের আওতায় আনতে হবে: বিএনপি

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৩:৫৯ অপরাহ্ণ

গণহত্যার দায়ে আ. লীগকে বিচারের আওতায় আনতে হবে: বিএনপি

বিএনপি জোরালো দাবি তুলেছে, আওয়ামী লীগকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। শনিবার (৫ এপ্রিল) রাত ৮টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই দাবি জানান। তিনি বলেন, দেশের জনগণ এই বিচার চায়, এবং এটি সম্ভব করতে সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধের বিচার করা জরুরি। সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ এই বিচারের পথ দেখায়। জনগণ এমন একটি প্রক্রিয়া মেনে নেবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমরা প্রস্তাব করছি, প্রতিটি বিভাগে একটি করে এমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই বিচার গণতান্ত্রিক পথে হতে হবে, যাতে জনগণের আস্থা অটুট থাকে।

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়েও তিনি কথা বলেন। “প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কিন্তু এখন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। কখনো বলা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুন, আবার কখনো জুন থেকে ডিসেম্বর। আমরা দাবি করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।” তিনি বলেন, সংস্কার ও বিচারের দাবি তাদের মূল লক্ষ্য, তবে এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই হতে হবে।

বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারাও বিএনপির এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। সালাহউদ্দিন জানান, “আমাদের এই অবস্থানে হেফাজতের নেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। তারাও চান এই অপরাধের বিচার হোক।” এছাড়া তিনি আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, “এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। এগুলো তুলে নেওয়া উচিত।”

বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। হেফাজতের পক্ষে মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, নায়েবে আমির মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী অংশ নেন। এই বৈঠক দুই দলের মধ্যে সমঝোতার একটি ইঙ্গিত দিয়েছে।

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে ব্যাপক দমন-পীড়ন হয়েছে। গণতন্ত্র হরণ করে তারা জনগণের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। এসব অপরাধের হিসাব দিতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। এখন জনগণের প্রত্যাশা, অতীতের এই অপরাধগুলোর বিচার হবে।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা পরিষ্কার দিকনির্দেশনা চাই। নির্বাচন কবে হবে, সংস্কার কীভাবে হবে—এসব বিষয়ে জনগণের মধ্যে সংশয় কাটাতে হবে।” তিনি বলেন, বিএনপি সংস্কারের পক্ষে, তবে তা জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে। “আমরা চাই না সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত নিক। জনগণের প্রতিনিধিরা এই কাজে যুক্ত থাকুক,” যোগ করেন তিনি।

হেফাজতের সঙ্গে এই বৈঠককে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। “আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। হেফাজতও এই বিচারের দাবিকে সমর্থন করেছে।” তিনি বলেন, আলেমদের ওপর দায়ের করা মামলাগুলো তুলে না নিলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও সরাসরি কথা বলেননি। তবে তার উপস্থিতি দলের শীর্ষ পর্যায়ের সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। তার জন্য অতীতের অপরাধীদের বিচার এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অপরিহার্য।”

বিএনপির এই দাবি দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে, যাতে তারা নির্বাচন ও বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি