বুধবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:১০

ইসরায়েলি হামলায় হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৩, ২০২৫ ৪:৪০ অপরাহ্ণ
ইসরায়েলি হামলায় হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত

ইসরায়েলি হামলায় হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তাদের সর্বশেষ অভিযানে হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এই কর্মকর্তা হলেন ওসামা তাবাশ, হামাসের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। এই হামলা গাজার খান ইউনিস এলাকায় সংঘটিত হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র একটি ভবনে আঘাত হানে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খান ইউনিসে একটি নির্ভুল হামলা চালানো হয়েছে। এই অভিযানে ওসামা তাবাশকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে।” হামলাটি শুক্রবার গভীর রাতে সংঘটিত হয়, যখন গাজার আকাশে ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের গর্জন শোনা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, একটি বিশাল বিস্ফোরণে ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, এবং আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ একটি প্রচণ্ড শব্দে বিছানা থেকে ছিটকে পড়ি। বাইরে তাকাতেই দেখি আগুন আর ধোঁয়ায় চারদিক ঢেকে গেছে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় কমপক্ষে ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা শুধুমাত্র হামাসের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। এই দাবির সত্যতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একজন বাসিন্দা বলেন, “তারা বলে শুধু জঙ্গিদের মারছে, কিন্তু আমাদের বাড়ি-ঘর, আমাদের সন্তানদের লাশই বেশি পড়ে আছে।”

ওসামা তাবাশ ছিলেন হামাসের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি গাজায় হামাসের গোপন নজরদারি ও লক্ষ্য নির্ধারণের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, তাবাশ ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর হামলার পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যে হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনেরও বেশি জিম্মি হয়েছিলেন। এই ঘটনার পর থেকেই তিনি ইসরায়েলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিলেন।

তাবাশের নেতৃত্বে হামাসের গোয়েন্দা বিভাগ গাজার সুড়ঙ্গ ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনীর গতিবিধির উপর নজর রাখত এবং হামলার পরিকল্পনা করত। তার মৃত্যুকে হামাসের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, “তাবাশ ছিলেন হামাসের মস্তিষ্ক। তার মৃত্যুতে গোষ্ঠীটির গোয়েন্দা ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

এই হামলার পর হামাসের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে গোষ্ঠীটির একজন নিম্ন-স্তরের নেতা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ইসরায়েল আমাদের নেতাদের হত্যা করে ভেবেছে আমরা ভেঙে পড়ব। কিন্তু প্রতিটি শহীদের রক্ত আমাদের আরও শক্তিশালী করে।”

ইসরায়েলের এই হামলা তাদের ‘টার্গেটেড কিলিং’ কৌশলের অংশ। গত এক বছরে হামাসের শীর্ষ নেতা যেমন সালেহ আল-আরৌরি, মোহাম্মদ দেইফ, ইসমাইল হানিয়া এবং ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মতো ব্যক্তিদের হত্যা করে ইসরায়েল গোষ্ঠীটির নেতৃত্বকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা হামাসকে শেষ করে ছাড়ব। যারা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলবে, তাদের কেউ বাঁচবে না।” তবে এই কৌশল কতটা ফলপ্রসূ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, প্রতিবার একজন নেতা নিহত হলে হামাস নতুন নেতৃত্ব গঠন করে আরও শক্তিশালীভাবে ফিরে এসেছে।

এই হামলার পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “গাজায় সংঘাত বন্ধ করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ড শুধু পরিস্থিতিকে আরও জটিল করবে।”

ওসামা তাবাশের মৃত্যু হামাসের জন্য একটি ক্ষতি হলেও, এটি যুদ্ধের সমাপ্তি নয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা হামাসকে আরও কঠোর প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করবে। ইসরায়েলের লক্ষ্য যদি হামাসকে নির্মূল করা হয়, তবে তাদের এই পথে আরও অনেক দূর যেতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই রক্তপাতের শেষ কোথায়? গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবনের আশা ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছে, আর বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা এই সংকটকে আরও গভীর করছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি