মঙ্গলবার, ৩রা জুন, ২০২৫| রাত ৮:৫১

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে তোলপাড়: চীন, কানাডা, ভিয়েতনামের পাল্টা হুঙ্কার

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৫, ২০২৫ ২:৫৯ অপরাহ্ণ
ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে তোলপাড়: চীন, কানাডা, ভিয়েতনামের পাল্টা হুঙ্কার

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে তোলপাড়: চীন, কানাডা, ভিয়েতনামের পাল্টা হুঙ্কার

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে নতুন শুল্কঝড় তুলেছে, আর এর জবাবে চীন, কানাডা, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ একাধিক দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে মাঠ গরম করেছে। গত কয়েকদিনে এই বাণিজ্যযুদ্ধ যেন এক নতুন মোড় নিয়েছে, যেখানে প্রতিটি দেশ নিজেদের অর্থনীতি বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫, এই উত্তেজনার সর্বশেষ ধাপ হিসেবে চীন ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ১০ এপ্রিল থেকে সব মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হবে। এদিকে কানাডাও পিছিয়ে নেই, তারা মার্কিন যানবাহনের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম আর কম্বোডিয়া শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজছে। এই ঘটনাপ্রবাহে বিশ্ব অর্থনীতি এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

গত বুধবার ট্রাম্প বাংলাদেশ, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই দেশগুলো মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক বসিয়ে রেখেছে, তাই এটি একটি ‘পারস্পরিক’ পদক্ষেপ। উদাহরণ হিসেবে, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ আর ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক ধরা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার চীনের পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে, যা আগের ২০ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়ে মোট ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্পের এই আগ্রাসী নীতির ফলে রপ্তানিনির্ভর দেশগুলোর অর্থনীতিতে ধাক্কা লেগেছে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে, যেখানে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাজার।

চীন এই শুল্কযুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। শুক্রবার দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, মার্কিন কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর আগে থেকেই ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, এখন তার সঙ্গে নতুন ৩৪ শতাংশ যোগ হবে। এছাড়া বিরল কিছু পণ্যের রপ্তানিতেও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বেইজিং। ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ’-এ লিখেছেন, “চীন ভুল খেলেছে। তারা আতঙ্কিত। তবে তাদের এটি করার সামর্থ্য নেই।” তবে চীনের পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে, তারা এই যুদ্ধে পিছপা হওয়ার মুডে নেই।

কানাডাও ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মার্ক ক্র্যানি এক্সে ঘোষণা দিয়েছেন, মার্কিন যানবাহনের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, “ট্রাম্প আমাদের অটোমোবাইল খাতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়েছেন, আমরাও পাল্টা জবাব দিয়েছি। এই অর্থ আমাদের শিল্প ও কর্মীদের জন্য ব্যয় হবে।” কানাডা-ইউনাইটেড স্টেটস-মেক্সিকো এগ্রিমেন্ট (CUSMA) চুক্তির আওতায় যানবাহনে শুল্কছাড় থাকলেও, এখন থেকে মার্কিন যানবাহনের জন্য তা বাতিল করা হয়েছে। তবে গাড়ির যন্ত্রাংশে শুল্ক আরোপ না করে কানাডা সরবরাহ চেইন অক্ষুণ্ণ রাখতে চায়।

এদিকে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া শুল্কযুদ্ধে একটু ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। কম্বোডিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী চাম নিমুল মার্কিন পণ্যে শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। মোটরসাইকেল, গাড়ি, কৃষিপণ্যের মতো ১৯টি ক্যাটাগরি এই পরিকল্পনায় রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শুল্ক আরোপের তারিখ পিছিয়ে আলোচনার অনুরোধও জানিয়েছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, শুল্ক ছাড়াও কম্বোডিয়া মুদ্রা কারসাজি ও কর ব্যবস্থার মাধ্যমে বাণিজ্যে বাধা দিচ্ছে।

ভিয়েতনামের প্রস্তাব আরও আকর্ষণীয়। ট্রাম্প ‘ট্রুথ’-এ জানিয়েছেন, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব তো লাম তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “ভিয়েতনাম শুল্ক শূন্য শতাংশে নামাতে চায়, যদি আমাদের সঙ্গে চুক্তি হয়।” এর আগে ভিয়েতনাম তিন মাস সময় চেয়েছিল এবং মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ট্রাম্প স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে বলেছেন, “আমার নীতি কখনো বদলাবে না।” তবে তিনি আলোচনার কিছু জায়গা খোলা রেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বাড়ছে। চীনের মতো দেশ পাল্টা আঘাত হানছে, কানাডা নিজের শিল্প বাঁচাতে ব্যস্ত, আর ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া সমঝোতার পথে হাঁটছে। এই বাণিজ্যযুদ্ধের পরিণতি কী হবে, তা এখনো অজানা। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার—ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্বকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি