নাইজারে মসজিদে হামলায় নিহত অন্তত ৪৪
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে একটি শান্ত গ্রামের মসজিদে শুক্রবার (২১ মার্চ, ২০২৫) নামাজের সময় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় অন্তত ৪৪ জন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। এই নৃশংস ঘটনায় আরও ১৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন, যারা জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। নাইজারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোকোরো শহরের ফোমিতা গ্রামে এই হামলা চালিয়েছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্থানীয় শাখা ইআইজিএস। ঘটনাটি নাইজার, বুরকিনা ফাসো ও মালির সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে, যেখানে জঙ্গি তৎপরতা দীর্ঘদিনের সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে রক্তাক্ত দৃশ্যের ভয়ঙ্কর চিত্র। শুক্রবারের জুমার নামাজের জন্য মুসল্লিরা যখন মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন, তখনই সশস্ত্র জঙ্গিরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে মুসল্লিদের হত্যা করে। নাইজারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলাকারীরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে গ্রামের বাজার ও কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে শান্ত গ্রামটি মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা নামাজে দাঁড়িয়েছিলাম, হঠাৎ গুলির শব্দ। তারপর শুধু চিৎকার আর রক্ত দেখেছি।”
ইআইজিএস, যারা আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত, এই হামলার জন্য দায়ী বলে নাইজার সরকার জানিয়েছে। তবে গোষ্ঠীটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি। ঘটনার পর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু ততক্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুও রয়েছে বলে জানা গেছে। এই হামলার পর দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
নাইজারের সাহেল অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি হামলার কবলে। এই হামলা সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো গ্রামাঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য এ ধরনের নৃশংসতা চালাচ্ছে। একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, “মসজিদে হামলার মতো ঘটনা জনগণের মনে আতঙ্ক ছড়ানোর কৌশল।” এই অঞ্চলে জঙ্গিদের হামলায় ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আর লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “ধর্মীয় স্থানে এমন হামলা অগ্রহণযোগ্য।” তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, শুধু নিন্দা নয়, কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। একজন গ্রামবাসী ক্ষোভে বলেন, “আমরা শান্তিতে নামাজ পড়তে পারব না? এই জঙ্গিদের কে থামাবে?”
এই হামলা নাইজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। জনতার মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, আর প্রশ্ন উঠছে—এই রক্তপাতের শেষ কোথায়?