শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৩:৩৭

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৯ শিশুসহ নিহত ১৮

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৫, ২০২৫ ২:২৬ অপরাহ্ণ
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৯ শিশুসহ নিহত ১৮

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৯ শিশুসহ নিহত ১৮

ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ক্রিভি রি-তে শুক্রবার সারাদিন ধরে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই হামলায় ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ৯ জনই শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন। এই শহরটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত, যেখানে তিনি বড় হয়েছেন। এই হামলার পর শহরজুড়ে শোক আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ইউਕ্রেনের মানবাধিকার বিষয়ক সর্বোচ্চ কর্মকর্তা দিমিত্রো লুবিনেটস টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, “রুশ বাহিনী এই হামলায় বেশ কয়েক ডজন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এগুলো এতটাই শক্তিশালী এবং দ্রুত যে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া এদের আটকানো প্রায় অসম্ভব।” এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম, যা এই হামলার ভয়াবহতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, “এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের সেনা কর্মকর্তা, সদস্য এবং বিদেশি প্রশিক্ষকরা।” তাদের মতে, এই হামলায় ৮৫ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা, কর্মকর্তা ও বিদেশি প্রশিক্ষক নিহত হয়েছেন এবং ২০টির বেশি যানবাহন ধ্বংস হয়েছে। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি।

ক্রিভি রি-তে এখন ধ্বংসস্তূপ সাফাই এবং উদ্ধার কাজ চলছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, “আমরা যারা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে, তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছি।” তিনি টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, “পুরো বিশ্ব ইউক্রেনের এই পরিস্থিতি দেখছে। রাশিয়ার প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র, প্রতিটি ড্রোন প্রমাণ করে যে তারা শুধু যুদ্ধই চায়।” তার এই কথায় রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।

হামলার পর ক্রিভি রি-তে ধ্বংসের চিহ্ন সর্বত্র। শিশুদের মৃত্যুর খবর শহরবাসীকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “এটা কোনো যুদ্ধ নয়, এটা নিরীহ মানুষের ওপর নির্মমতা।” হাসপাতালগুলো আহতদের ভিড়ে ঠাসা। অনেকে তাদের প্রিয়জনদের খুঁজতে ধ্বংসস্তূপের কাছে ভিড় করছেন। উদ্ধারকারীরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু ধ্বংসের পরিমাণ এতটাই বেশি যে আশা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে।

রাশিয়ার দাবি এবং ইউক্রেনের বক্তব্যের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যেখানে বলছে এটি সামরিক লক্ষ্যে হামলা, সেখানে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, “এটি বেসামরিক এলাকায় নির্বিচার আক্রমণ।” ৯ শিশুর মৃত্যু এই দাবির পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জেলেনস্কির জন্মশহরে এই হামলা ইউক্রেনীয়দের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু রাশিয়া তা দিতে প্রস্তুত নয়।” এই হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আবারও ইউক্রেনের দিকে। অনেকে এটিকে যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

ক্রিভি রি-তে এখন শোকের ছায়া। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে আটকে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, “আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব।” শিশুদের হারানো পরিবারগুলোর কান্না শহরের বাতাসে ভারী হয়ে ঝুলে আছে। এই হামলা কেবল প্রাণহানিই নয়, ইউক্রেনীয়দের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি