গাজায় যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তদন্ত চান ১৩ ইসরায়েলি আইনজীবী
গাজা উপত্যকায় চলমান দ্বিতীয় দফার সামরিক অভিযানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ইসরায়েলের ১৩ জন আইনজীবী। তারা এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল গ্যালি বাহারাভ-মিয়ারা এবং সামরিক বাহিনীর আইনজীবী ইফাত তোমের-ইয়ারুশালমির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎস বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
হারেৎস আরও জানতে চেয়েছিল এই চিঠি ও অভিযোগ নিয়ে। তারা গ্যালি এবং ইফাতের দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই নীরবতা বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ১৩ আইনজীবীর এই দাবি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে গাজার অভিযান নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগেরই প্রতিফলন।
এই সংঘাতের শুরু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী সেদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক অভিযান শুরু করে। প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা এই অভিযানে ৪৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল, কিন্তু শান্তি বেশিদিন টেকেনি।
হামাসের সঙ্গে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতবিরোধের জেরে গত ১৮ মার্চ থেকে আইডিএফ ফের গাজায় অভিযান শুরু করে। এই দ্বিতীয় দফায় গত ১৭ দিনে ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এই অভিযানের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে—বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচার হামলা, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। এসব নিয়েই ১৩ আইনজীবী তদন্তের দাবি তুলেছেন।
তারা চিঠিতে বলেছেন, “এই অভিযানে যা ঘটছে, তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এর সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি।” তারা ইসরায়েলের নিজস্ব আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে এই বিষয়টি দেখতে চান, যাতে সত্য উদঘাটন হয়। হারেৎস জানায়, এই আইনজীবীরা মনে করেন, তদন্ত না হলে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গাজায় প্রথম দফার অভিযানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। হাসপাতাল, স্কুল, বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। দ্বিতীয় দফায়ও একই চিত্র। স্থানীয়রা বলছেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু এখানে শুধু মৃত্যু আর ধ্বংস।” এই পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করে, “আমরা হামাসের বিরুদ্ধে লড়ছি, বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে নয়।” কিন্তু নিহতদের মধ্যে নারী-শিশুর সংখ্যা এই দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। আইনজীবীরা বলছেন, “এই অভিযানের প্রতিটি পদক্ষেপ পরীক্ষা করা দরকার।”
এই চিঠির পর গ্যালি বাহারাভ-মিয়ারা এবং ইফাত তোমের-ইয়ারুশালমি কী করবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তদন্ত শুরু হলে এটি ইসরায়েলের সামরিক নীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। গাজার মানুষের কষ্টের মধ্যে এই দাবি একটি নতুন আলো জ্বালিয়েছে। কিন্তু তদন্ত হবে কি না, আর হলেও কী ফলাফল আসবে—এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। এই ১৩ আইনজীবীর সাহসী পদক্ষেপ গাজার যুদ্ধ নিয়ে নতুন আলোচনার দ্বার খুলে দিয়েছে।