শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:০৩

মিয়ানমারে ৩০ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে নারীকে জীবিত উদ্ধার

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ৩০, ২০২৫ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ
মিয়ানমারে ৩০ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে নারীকে জীবিত উদ্ধার

মিয়ানমারে ৩০ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে নারীকে জীবিত উদ্ধার

ভয়াবহ ভূমিকম্পের ৩০ ঘণ্টা পর মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার শক্তিশালী জোড়া ভূমিকম্পে মান্দালয়ে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধসে পড়ে, যেখানে অন্তত ৯০ জন মানুষ আটকা পড়েছিলেন। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে একজনকে জীবিত উদ্ধারের এই ঘটনা সবাইকে নতুন করে আশা জুগিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পরপরই ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রমের পর, ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর উদ্ধারকারীরা অবশেষে এক নারীকে জীবিত অবস্থায় বের করে আনতে সক্ষম হন। এই নারী হলেন ৩০ বছর বয়সী ফিউ লে খাইং। তাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করার পরপরই স্ট্রেচারে তোলা হয়। সেই মুহূর্তে তার স্বামী ইয়ে আউং তাকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধারের এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই উল্লাসে ফেটে পড়েন। এটি ছিল একটি অলৌকিক ঘটনা, যা সবাইকে আবেগে ভাসিয়ে দিয়েছে।

ফিউ লে খাইংয়ের স্বামী ইয়ে আউং এএফপিকে বলেছেন, “শুরুতে আমি ভেবেছিলাম, সে বেঁচে নেই। ধ্বংসস্তূপের নিচে ৩০ ঘণ্টা আটকে থাকার পর তাকে জীবিত পাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারিনি।” তিনি আরও বলেন, “যখন শুনলাম সে বেঁচে আছে, আমার আনন্দের সীমা ছিল না। আমার দুই ছেলে, আট বছরের উইলিয়াম আর পাঁচ বছরের ইথান, তাদের মাকে ফিরে পেয়ে খুশিতে উৎফুল্ল।” ইয়ে আউংয়ের এই কথাগুলোতে ফুটে উঠেছে একজন স্বামী ও বাবার গভীর আবেগ।

এই উদ্ধারের ঘটনাটি ঘটেছে মান্দালয়ের স্কাই ভিলা কনডোমিনিয়ামে। এই ১২ তলা ভবনের অর্ধেকটা ভূমিকম্পে ধসে পড়ে। শুক্রবার দুপুরে ৭.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি মান্দালয়ের উত্তর-পশ্চিমে আঘাত হানে, যার পরপরই ৬.৭ মাত্রার একটি আফটারশক আসে। এই জোড়া ভূমিকম্পে মান্দালয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। ভবন ধসে পড়ে, সেতু ভেঙে যায়, রাস্তা ফেটে চৌচির হয়ে যায়। এই শহরে ১৭ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করেন, এবং এটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর হিসেবে পরিচিত।

এদিকে, এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির সামরিক জান্তা। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৩৭৬ জন, আর ৩০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) একটি ভয়াবহ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। তারা বলছে, এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ১০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার হাজার মানুষ আটকে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, কিন্তু ধ্বংসস্তূপের বিশালতা এবং অবকাঠামোর ক্ষতির কারণে তাদের কাজ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মান্দালয়ে উদ্ধার অভিযানে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন। একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, “এত বড় বিপর্যয়ের জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জনবল, যন্ত্রপাতি বা গাড়ি নেই। অনেকেই আটকে আছেন, কিন্তু সাহায্য পৌঁছানোর গতি খুবই কম।” এই পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট। দেশটির সামরিক সরকার সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছে, যা তাদের জন্য একটি বিরল পদক্ষেপ।

ভূমিকম্পের প্রভাব শুধু মিয়ানমারেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও এর তীব্র কম্পন অনুভূত হয়। ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি ৩০ তলা ভবন ধসে পড়ে। থাইল্যান্ডের জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে ১১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। ব্যাংককের চাতুচাক মার্কেটের কাছে এই ভবনটি ধসে পড়ায় ৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকারীরা ড্রোন, সার্চ ডগ এবং ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সেখানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিয়ানমারে এই ভূমিকম্প এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে জানিয়েছে ইউএসজিএস। এর কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয়ের কাছে সাগাইং ফল্টের উপর। এই ভূমিকম্পে শুধু ভবনই নয়, ঐতিহাসিক প্যাগোডা, মসজিদ এবং সেতুগুলোও ধ্বংস হয়েছে। মান্দালয়ের মাহা মিয়াত মুনি প্যাগোডার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে ফিউ লে খাইংয়ের উদ্ধার একটি আলোর ঝলক এনে দিয়েছে।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সাহায্যও মিয়ানমারে পৌঁছাতে শুরু করেছে। চীন, ভারত এবং রাশিয়া থেকে উদ্ধারকারী দল, চিকিৎসা সহায়তা এবং ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। তবে দেশটির ভেঙে পড়া অবকাঠামো এবং গৃহযুদ্ধের কারণে সাহায্য পৌঁছানোর পথে বড় বাধা রয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কার্যালয় জানিয়েছে, হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড়ে জায়গা নেই, এবং রাস্তার ক্ষতির কারণে সাহায্য পৌঁছাতে সময় লাগছে।

এই ঘটনা আমাদের সামনে তুলে ধরেছে প্রকৃতির ভয়াবহতা এবং মানুষের জীবন রক্ষার জন্য উদ্ধারকারীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা। ফিউ লে খাইংয়ের জীবিত উদ্ধার অনেকের মনে আশা জাগিয়েছে। কিন্তু এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন। তাদের উদ্ধারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ চলছে। আমরা প্রত্যাশা করি, এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য শিগগিরই শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের

আজ দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

আজ দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ, দিল্লির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ, দিল্লির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

গাদ্দাফির মতো পরিণতি হতে পারে খামেনির, হুঁশিয়ারি কট্টরপন্থিদের

গাদ্দাফির মতো পরিণতি হতে পারে খামেনির, হুঁশিয়ারি কট্টরপন্থিদের

ইতিহাসের এই দিনে (১৮ এপ্রিল, ২০২৫)

ইতিহাসের এই দিনে (৯ জানুয়ারি, ২০২৫)

বসুন্ধরা গ্রুপে সিনিয়র অপারেটর পদে নিয়োগ, আবেদন করা যাবে এসএসসি পাসেও

এফবিআইয়ের প্রধান পদে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্যাশ প্যাটেলের নিয়োগ অনুমোদন

এফবিআইয়ের প্রধান পদে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্যাশ প্যাটেলের নিয়োগ অনুমোদন

গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা

গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা

কোনো উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান ছাত্রশিবিরের।

কোনো উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান ছাত্রশিবিরের।

বিশ্বের সঙ্গে একই দিনে রোজা-ঈদ পালনের পথ খোঁজার আহ্বান তারেক রহমানের

বিশ্বের সঙ্গে একই দিনে রোজা-ঈদ পালনের পথ খোঁজার আহ্বান তারেক রহমানের