ঈদের বাজার ও অর্থনীতির প্রবাহ: এক বিশ্লেষণ
রমজান মাসের শেষের দিকে ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সবপ্রান্তে। এই সময় দান-সদকা থেকে শুরু করে কেনাকাটার ধুম চলছে। ঈদ উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ বৃদ্ধি করেন, যা দেশের অর্থনীতিতে এক বিশাল প্রবাহ সৃষ্টি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের প্রথম ২৬ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২.৯৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮২ শতাংশ বেশি।
তবে, ঈদের বাজারে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা শঙ্কাজনক। বিপণী বিতানগুলোতে বিশেষ করে পোশাকের বাজারে গত বছরের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। দেশীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাইলেও, বিদেশী পোশাকের আমদানি কমেছে এবং ঢাকার বাজারে কেনাকাটা কম হলেও মফস্বলের বাজারে জমজমাট অবস্থা বিরাজ করছে।
দেশীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, দেশীয় পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে পোশাকের বাজারে আমদানি কমেছে। গত বছর যেখানে প্রায় ৫-৬ হাজার কোটি টাকার পোশাক আমদানি হয়েছিল, এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১-১.৫ হাজার কোটি টাকায়। এতে করে স্থানীয় উৎপাদকরা উপকৃত হয়েছেন, এবং তাদের ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
পোশাক বাজারে মন্দাভাব
ঢাকার বাজারে পোশাকের বিক্রি গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে, যার মূল কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের আগ্রহের কমে যাওয়া মনে করছেন। অনেকেই আগের তুলনায় একটি বা দুটি পোশাক কিনছেন, আগে যারা একসঙ্গে কয়েকটি পোশাক কিনতেন, তারা এবার সেভাবে কেনাকাটা করছেন না। ফ্যাশন হাউসগুলোর মালিকরা জানিয়েছেন, পোশাকের দাম ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে, যার প্রভাব সরাসরি বিক্রিতে পড়েছে। তবে, দেশীয় ব্র্যান্ড গুলোর বিক্রি আগের তুলনায় একটু ভালো হয়েছে।
ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা
এদিকে, ইলেকট্রনিক পণ্য ও গ্যাজেটের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার সহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের বিক্রি ভালো হয়েছে। শপিং মল ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো জানিয়েছে, নগরবাসীর মধ্যে কিস্তিতে কেনাকাটা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্টফোন এবং ওয়্যারলেস ইয়ারফোনের বিশেষ অফারগুলির কারণে বিক্রি বাড়ছে।
শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা ও মফস্বল বাজার
ঈদ উপলক্ষে ঢাকার বাজারে ক্রেতাদের সংখ্যা কমে গিয়েছে, কারণ অনেকেই ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় ঢাকার বাইরে চলে গেছেন। তবে, মফস্বলের বাজারগুলো তুঙ্গে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে মফস্বল বাজারের কেনাকাটা আরও বাড়তে পারে।
পর্যটন খাতে সঙ্কট
ঈদের সময় মানুষ সাধারণত পর্যটন ও ভ্রমণ খাতে ব্যয় করে থাকে। তবে, এবারে দেশীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বুকিং কিছুটা কমেছে, বিশেষ করে কক্সবাজার, সুন্দরবন, শ্রীমঙ্গল গন্তব্যগুলোতে। তবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কা—এই দেশগুলোতে বাংলাদেশি পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণ
সবমিলিয়ে, ঈদের বাজারের পরিস্থিতি মিশ্র— কিছু ক্ষেত্রের বিক্রি কমলেও, দেশীয় পণ্য ও কিছু অন্যান্য খাতে চাহিদা বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাজারের পরিবর্তনশীলতা এই ঈদকে অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।