ইউক্রেনে অস্থায়ী প্রশাসনের প্রস্তাব পুতিনের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি ইউক্রেনে একটি অস্থায়ী প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত ২৭ মার্চ ২০২৫-এ রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় মুরমানস্ক বন্দরে নৌবাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। পুতিনের দাবি, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি অস্থায়ী সরকার প্রয়োজন। তিনি বলেন, “ইউক্রেনে এখন যারা ক্ষমতায় আছে, তারা আলোচনার জন্য বৈধ নয়। একটি শক্তিশালী সরকার গঠনের জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি।” এই প্রস্তাবে তিনি ব্রিকস দেশগুলো ও উত্তর কোরিয়ার সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেছেন।
পুতিনের এই বক্তব্য ইউক্রেনের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন যে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হয়েছে। তবে জেলেনস্কি বলছেন, যুদ্ধের কারণে সামরিক আইন জারি থাকায় নির্বাচন সম্ভব নয়। এই বিতর্কের মধ্যে পুতিনের প্রস্তাব এসেছে, যা অনেকে ‘কৌশলী পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন। একজন ইউক্রেনীয় নাগরিক বলেন, “আমরা যুদ্ধে ক্লান্ত। কিন্তু পুতিনের হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ তুলে দিতে চাই না।”
রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিক জানায়, পুতিন মনে করেন, অস্থায়ী প্রশাসন শুধু নির্বাচন নয়, শান্তি আলোচনার পথও সুগম করবে। তিনি বলেছেন, “এটি সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি পথ।” তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। জেলেনস্কি এটিকে ‘যুদ্ধ লম্বা করার চাল’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “পুতিন শান্তি চান না। তিনি সময় কাটাতে চান।” এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনও এই প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, “পুতিনকে এভাবে খেলতে দেওয়া যাবে না।”
এই প্রস্তাবের পেছনে পুতিনের যুক্তি হলো, ইউক্রেনে বৈধতার সংকট রয়েছে। তিনি জেলেনস্কির সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “একটি নিরপেক্ষ প্রশাসনই কেবল সমাধান দিতে পারে।” তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি রাশিয়ার প্রভাব বাড়ানোর কৌশল হতে পারে। একজন রুশ নাগরিক বলেন, “পুতিন যা বলছেন, তা শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমরা জানি না এর পরিণতি কী হবে।”
ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শহরগুলো ধ্বংসের মুখে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনও সম্প্রতি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যাতে ইউক্রেন সম্মতি দেয়। পুতিন সেই প্রস্তাবে শর্ত যুক্ত করেছিলেন। এবার তার নতুন প্রস্তাবে জাতিসংঘের ভূমিকার কথা বলা হলেও, এটি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
একজন কিয়েভের বাসিন্দা বলেন, “আমরা শান্তি চাই। কিন্তু এভাবে নয়। আমাদের স্বাধীনতা বিক্রি করা যাবে না।” আন্তর্জাতিক মহলও এই প্রস্তাবে বিভক্ত। কেউ কেউ এটিকে শান্তির সম্ভাবনা মনে করলেও, অনেকে এটিকে রাশিয়ার আধিপত্যের চেষ্টা বলে দেখছেন। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। পুতিনের এই প্রস্তাব কীভাবে এগোবে, তা সময়ই বলবে। তবে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা একটাই—এই যুদ্ধের অবসান।