যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’কে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের একটি স্বাধীন প্যানেল, ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ), ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ প্রকাশিত এই সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি অমানবিক আচরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রতিবেদনে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হত্যা পরিকল্পনায় ‘র’ এর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, যার ফলে এই সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের নজরদারি ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পন্নুনের হত্যার ব্যর্থ চেষ্টায় ‘র’ এর সাবেক কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই এই ঘটনায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে ভারত এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে এবং শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদনে ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গত বছরের নির্বাচনী প্রচারে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ভুল তথ্য ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, মোদির “মুসলিমরা বেশি সন্তান জন্ম দেয়” এবং “অনুপ্রবেশকারী” বলে মন্তব্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ এবং ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, ইউএসসিআইআরএফের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেছেন, ভারতের বহুত্ববাদী সমাজকে বোঝার ক্ষেত্রে এই কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। মোদি সরকারও জানিয়েছে, তাদের উন্নয়ন প্রকল্প সব সম্প্রদায়ের জন্য সমানভাবে কাজ করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সুপারিশ বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম। ইউএসসিআইআরএফের পরামর্শ বাধ্যতামূলক নয়, এবং চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। তবে এই ঘটনা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, শিখ ইস্যুতে উত্তেজনা বাড়ছে। ভারতীয় দূতাবাস এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেয়নি।
এই প্রতিবেদনে ভিয়েতনামকেও ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে, ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির কারণে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে ‘র’ এর ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।