শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| দুপুর ১:৪৭

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট : মির্জা ফখরুল

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৬, ২০২৫ ৫:৪২ অপরাহ্ণ
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট : মির্জা ফখরুল

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট : মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্যকে ‘অস্পষ্ট’ ও ‘দ্বিধাগ্রস্ত’ বলে সমালোচনা করেছেন। বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচনের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এটি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।” তাঁর এই মন্তব্য দেশে চলমান নির্বাচনী আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

মির্জা ফখরুলের এই সমালোচনার সূত্রপাত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের গত সপ্তাহে দেওয়া এক বক্তব্য থেকে। ড. ইউনূস জানিয়েছিলেন, “সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হলে নির্বাচন হবে। তবে, এর জন্য সঠিক সময় ও পরিবেশ প্রয়োজন।” তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো সময়সীমা বা রোডম্যাপ উল্লেখ করেননি, যা বিএনপির এই নেতার কাছে অস্পষ্ট মনে হয়েছে। ফখরুল বলেন, “জনগণ জানতে চায় কবে নির্বাচন হবে, কীভাবে হবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কথায় কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটি সরকারের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করে দীর্ঘ নয় মাস লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর এই জাতির ওপরে নির্যাতন চালিয়েছে। তারা হত্যা করেছে, গুম-খুন করেছে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই অবস্থান থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কারগুলো করে অতি দ্রুত নির্বাচন দেবে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। দলটির মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দীর্ঘায়িত শাসন দেশে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় এসেছে। এই সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। তবে, সংস্কার প্রক্রিয়ার ধীরগতি নিয়ে বিএনপি বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফখরুল বলেন, “আমরা সংস্কার চাই, কিন্তু তা দীর্ঘসূত্রিতা হলে জনগণের আস্থা নষ্ট হবে। প্রধান উপদেষ্টার দ্বিধাগ্রস্ত বক্তব্য এই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফখরুলের এই বক্তব্য বিএনপির নির্বাচনী চাপ বাড়ানোর কৌশল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক বলেন, “বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়, কারণ তারা মনে করে এখনই তাদের জনপ্রিয়তা বেশি। তবে, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সত্যিই কিছুটা অস্পষ্ট, যা বিরোধীদের সমালোচনার সুযোগ দিচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, সংস্কারের গতি না বাড়লে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ ফখরুলের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছেন, “নির্বাচনের জন্য আর দেরি করা উচিত নয়।” আবার কেউ মনে করেন, “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আবারও সংঘাত হবে।” এই বিতর্কের মধ্যে জনগণের প্রত্যাশা এখন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি