গাজায় হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে – ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল গাজা উপত্যকায় চলমান সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের প্রতি অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, যা গত কয়েক মাসে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনির জীবন কেড়ে নিয়েছে। ২৪ মার্চ, ২০২৫-এ এক বিবৃতিতে বোরেল বলেন, “গাজায় যা ঘটছে তা অগ্রহণযোগ্য। এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে এবং মানবিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও এই সংকটে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযান ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর থেকে তীব্রতর হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে চরম মানবিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান বোরেল এই পরিস্থিতিকে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “এটি শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে, বোরেল এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “সামরিক পদক্ষেপে সমস্যার সমাধান হবে না। এটি কেবল আরও হত্যাকাণ্ড ও দুর্ভোগ বাড়াবে।” তিনি উভয় পক্ষকে সংযমী হতে এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
ইইউ ইতিমধ্যে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর তহবিল ঘোষণা করেছে। তবে, বোরেল স্বীকার করেছেন যে, সাহায্য বিতরণে বাধার কারণে এটি পর্যাপ্ত নয়। গাজার বেশিরভাগ সীমান্ত বন্ধ থাকায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, গাজার ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে, যা পুনর্গঠনের জন্য বছরের পর বছর সময় লাগবে।
আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা কমানোর হুমকি দিয়েছে, যদি তারা গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা না কমায়। তবে, ইসরায়েল এখনও তার অবস্থানে অনড়। এদিকে, হামাসও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে শর্ত আরোপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার।
বোরেল আরও বলেন, “এই যুদ্ধ কেবল গাজায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে।” লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ইয়েমেনে হুথিদের হামলা এই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিসি) তদন্তেরও সমর্থন করেন, যেখানে ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে মামলা চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইইউ’র এই স্পষ্ট অবস্থান ইউরোপের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিফলন। ফ্রান্স ও জার্মানিও গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য একটি যৌথ প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। তবে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সফল না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। বোরেল শেষ পর্যন্ত জোর দিয়ে বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমাধান। এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।”