বৃহস্পতিবার, ২২শে মে, ২০২৫| রাত ১১:৫৯

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চায় বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
staffreporter
মে ১৩, ২০২৫ ৪:৩৯ অপরাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের চাপ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস এবং আমদানির উৎস পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু করেছে সরকার। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য পণ্যের একটি তালিকা ও ১০০টি নতুন পণ্যকে শুল্কমুক্ত করার প্রস্তাব ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর দফতরে পাঠানো হবে। এই প্রস্তাব বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) নীতিমালার আওতায় তৈরি হওয়ায় এর প্রভাব অন্যান্য সদস্য দেশেও পড়বে।

এক প্রাথমিক নথি অনুযায়ী, তুলা, এলপিজি, সয়াবিন, গম, প্রাকৃতিক গ্যাস, স্বর্ণ, ভুট্টা, ভ্যাকসিন, জুয়েলারি, বোর্ড ও প্যানেলসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৪০টি পণ্য আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যদিও এসব পণ্যের বেশিরভাগই বাংলাদেশ প্রচুর আমদানি করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসবের অংশ খুবই সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ২২২ কোটি ডলারের তুলা আমদানি করলেও এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল মাত্র ৩৩ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। একইভাবে এলপিজির ক্ষেত্রে ১৯০ কোটি ডলারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে মাত্র ৫ কোটি ১৩ লাখ ডলারের পণ্য।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য পণ্যের তালিকা ও শুল্কমুক্ত পণ্যের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে শিগগিরই ইউএসটিআর-এর কাছে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো— যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করা এবং এই বার্তার মাধ্যমে বোঝানো যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।”

সরকারের কর্মকর্তারা জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ শুধু ঘাটতি হ্রাস নয়, বরং একটি কৌশলগত বার্তাও বহন করে। এতে রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে।

উল্লেখ্য, ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৫৭টি দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন, যার মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্যে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করা হয়। যদিও তা তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে, তবে ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতার বড় চাপ তৈরি করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ১৯০টি পণ্যে শূন্য শুল্ক কার্যকর রেখেছে, নতুন ১০০টি পণ্য যুক্ত হলে আমদানি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। সরকার মনে করছে, এটি শুধু অর্থনৈতিক কৌশল নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

এদিকে ৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রেয়ার এক চিঠিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দেন। চিঠিতে তিনি শ্রম অধিকার রক্ষা এবং ডিজিটাল বাণিজ্যে অযাচিত বিধিনিষেধ না দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরও জানান, ‘শুল্ক ও অশুল্ক বাধা হ্রাস, কৃষি ও শিল্প খাত উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।’

সরকার চায়, দক্ষিণ কোরিয়া বা ভারতের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই পণ্য আমদানির হার বাড়াতে। বিশেষ করে জেনারেল মোটরস-এর গাড়ি ও বোয়িংয়ের তৈরি উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এলএনজি ও প্রযুক্তিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও একই পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি কোম্পানির বকেয়া পরিশোধ করেছে এবং ওরাকলের পাওনা মেটাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি, নকল সফটওয়্যার ব্যবহার, বিনিয়োগ বিধিনিষেধ ও মান নির্ধারণে জটিলতা দূর করে অশুল্ক বাধা কমানোর দিকেও সরকার মনোযোগ দিচ্ছে।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ