ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি: পাকিস্তানে লাখো মানুষের বিক্ষোভ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
ফিলিস্তিনের গাজার মানুষের প্রতি সমর্থন জানাতে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে পাকিস্তানের রাস্তায় লাখো মানুষ বিক্ষোভে নেমেছেন। ফিলিস্তিনের পতাকা ও হামাস নেতাদের ছবি হাতে নিয়ে তারা গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশে সম্প্রতি ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে লাখো মানুষের বিক্ষোভের পর পাকিস্তানেও এই সংহতি প্রকাশ ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সমর্থনের প্রতিফলন।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রোববার (১৩ এপ্রিল) পাকিস্তানের করাচির রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের নিন্দা জানান। আয়োজকদের দাবি, এই বিক্ষোভে এক লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন।
‘গাজা সংহতি মার্চ’ নামে এই বিশাল সমাবেশ করাচির প্রধান সড়ক শাহরা-এ-ফয়সালে অনুষ্ঠিত হয়। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মিছিল করেন এবং হামাসের দুই নিহত নেতা ইসমাইল হানিয়া ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছবি বহন করেন। রাস্তার বিদ্যুৎ খুঁটিতে এই নেতাদের ছবি ও বিজয়ের প্রতীকসহ পোস্টার টাঙানো হয়। এছাড়া গাজায় নিহত শিশুদের স্মরণে রাস্তায় সাদা কাফনে মোড়ানো পুতুল সাজিয়ে রাখা হয়, যা উপস্থিত জনতার মধ্যে গভীর আবেগ সৃষ্টি করে।
বিক্ষোভে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ অংশ নেন। অনেক নারী বোরকা পরে এবং তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে মিছিলে যোগ দেন। শুধু মুসলিম সম্প্রদায় নয়, খ্রিস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরাও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে এই সমাবেশে শরিক হন।
মিছিলে বিক্ষোভকারীরা “গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করো”, “ইসরায়েল নিপাত যাক” এবং “গাজায় গণহত্যা – মুসলিম বিশ্ব লজ্জিত হও” লেখা ব্যানার প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীদের একটি দল ১০০ ফুট দীর্ঘ ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করে, যা বিক্ষোভের একটি বিশেষ আকর্ষণে পরিণত হয়। জনতা “লাব্বাইক ইয়া গাজা” (গাজা, আমরা আছি) এবং “লাব্বাইক ইয়া আকসা” (আল-আকসা, আমরা আছি) স্লোগানে মুখরিত করে রাস্তা।
বিক্ষোভে জামায়াতে ইসলামি দলের প্রধান নেতা হাফেজ নাঈম-উর-রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনিদের কখনোই দমিয়ে রাখা যাবে না। তাদের সংগ্রাম আমাদের সবার সংগ্রাম।” একই দিনে জমিয়াতে উলামা ইসলাম (জেইউআই) দলের আয়োজনে একটি ফিলিস্তিন সংহতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে দলের প্রধান মাওলানা ফজল-উর-রহমান ইসরায়েলকে “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে সরাসরি সহযোগিতা করছে।”
বিক্ষোভকারী আলি মোস্তাফা, যিনি “মুক্তি না হলে শহীদ” লেখা পোস্টার বহন করছিলেন, বলেন, “করাচি এবং সমগ্র পাকিস্তান সবসময় ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকবে।” খ্রিস্টান নেতা ইউনাস সোহান বিশ্ব শক্তিগুলোর সমালোচনা করে বলেন, “তারা ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র এবং সাধারণ মানুষের ওপর হামলার সুযোগ করে দিচ্ছে। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। এই যুদ্ধে গাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
পাকিস্তানের এই বিক্ষোভ ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জনমতের একটি প্রতিফলন। বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানাতে রাস্তায় নামছে। এই আন্দোলন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবিকে আরও জোরালো করছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এই বিক্ষোভ বিশ্ব নেতাদের গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে।
সূত্র: আনাদোলু