জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করলেন সেনাপ্রধান, সেনা সদরে অফিসার্স অ্যাড্রেসে শান্তিপূর্ণ ভূমিকার নির্দেশ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। বুধবার সকালে সেনা সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই নিয়মিত কর্মসূচিতে সেনা সদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস থেকে কমান্ডারসহ নানা স্তরের সেনা কর্মকর্তা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান তার উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্যে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দেশে-বিদেশে সেনাবাহিনী নিয়ে নানা কথন চলছে, কেউ কেউ উস্কানিও দিচ্ছে—এসব গুজব থেকে দূরে থাকতে হবে।” এসময় তিনি সেনাবাহিনীর ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর জোর দেন এবং বলেন, এই ঐক্য দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরেও সেনাবাহিনীর মর্যাদা রক্ষা করে চলছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে মোট ছয়জন সেনা কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে একজন মেজর ও একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন, সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। সেনাপ্রধান মনোযোগ দিয়ে এসব বক্তব্য শুনে নিজের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
সেনাপ্রধান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সেনা সদস্যরা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছেন। এ জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, “বর্তমান আন্দোলনের সময় যারা দাবি তুলেছেন, তাদের দাবি শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে হবে।” এ সময় সেনাবাহিনী যেন সাধারণ জনগণের মুখোমুখি না হয়, সে বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে নির্দেশ দেন তিনি।
তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলেন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার সময় যেন সেনাবাহিনীর কেউ কোনো ধরনের অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। একজন মেজর তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘মব’ বা জনতা ঠেকাতে জনগণকে আরও সচেতন করা এবং পুলিশের ভূমিকা জোরদার করা জরুরি।
বৈঠকে মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর সুবিধা দেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া এবং ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন—এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাপ্রধানের ৯ পৃষ্ঠার একটি কথিত বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে, তবে তার সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
আইএসপিআরের পরিচালক লে. কর্নেল সামি-উদ-দৌলা-চৌধুরী ‘আমার দেশ’-এর সঙ্গে আলাপকালে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও গুজব প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু খবরকে গুজব বলে অভিহিত করা হয়েছে।