৬.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডে ২৪ মার্চ, ২০২৫ তারিখে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬.৭ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির দক্ষিণ দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কাছে, স্নারেস দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় বিকেল ২:৪৩ মিনিটে (বিশ্ব সময় সকাল ৯:৪৩ মিনিটে) আঘাত হানে এবং এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। নিউজিল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা জিওনেটের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি ৩৩ কিলোমিটার গভীরতায় সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় দেশটির বিস্তীর্ণ এলাকায় তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের তীব্রতা প্রাথমিকভাবে ৭.০ মাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হলেও পরবর্তী পরীক্ষায় এটি ৬.৭-এ নেমে আসে। জিওনেট জানিয়েছে, প্রায় ৪,৭০০-এর বেশি মানুষ এই কম্পন তীব্রভাবে অনুভব করেছেন। কম্পনের ফলে দক্ষিণ দ্বীপের রিভারটন এলাকা থেকে শুরু করে আশপাশের বিভিন্ন শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য জরুরি দল মোতায়েন করা হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অফ ফায়ার’ অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ ঘন ঘন ঘটে। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক অস্থিরতার সঙ্গে সংযুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ইউএসজিএস-এর তথ্যমতে, ভূমিকম্পটি অগভীর হওয়ায় এর প্রভাব বেশি এলাকায় অনুভূত হয়েছে। তবে, নিউজিল্যান্ডের জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে যে, সুনামির কোনো উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি নেই। এরপরও উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের সময় অনেকে বাড়ি ও অফিস থেকে বাইরে ছুটে আসেন। দক্ষিণ দ্বীপের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কম্পনের সময় আসবাবপত্র দুলতে শুরু করে এবং দেয়ালে ঝুলন্ত জিনিসপত্র পড়ে যায়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “এটি ছিল বেশ ভয়ঙ্কর। মনে হচ্ছিল মাটি কয়েক সেকেন্ডের জন্য নড়ে উঠেছে।”
নিউজিল্যান্ডে ভূমিকম্প কোনো নতুন ঘটনা নয়। ২০১১ সালে ক্রাইস্টচার্চে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৮৫ জন নিহত হয়েছিল। সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্প তেমন ধ্বংসাত্মক না হলেও, দেশটির ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকির কথা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের কম্পনের পর আফটারশকের সম্ভাবনা থাকে, তাই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
কর্তৃপক্ষ এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ করছে। জিওনেট জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর কয়েকটি ছোট আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে, তবে সেগুলোর মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দারা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী অবকাঠামোর ওপর আরও জোর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।