শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২৩

ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরার সাংবাদিকসহ নিহত আরও ৬১

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৫, ২০২৫ ১০:৪৩ অপরাহ্ণ
ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরার সাংবাদিকসহ নিহত আরও ৬১

ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরার সাংবাদিকসহ নিহত আরও ৬১

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন হামলা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন আল-জাজিরার একজন সাংবাদিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় আরও ১৩৪ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে আল-জাজিরা মুবাশেরের সাংবাদিক হোসাম শাবাতের মৃত্যু বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক সম্প্রদায়ে শোকের ছায়া ফেলেছে। গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় তার গাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়, যাতে তিনি প্রাণ হারান।

আল-জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড” হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, হোসাম শাবাত গাজায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের চিত্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরছিলেন। তিনি সংবাদ সংগ্রহের সময় “PRESS” চিহ্নিত জ্যাকেট পরে ছিলেন, যা স্পষ্টভাবে তাকে সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। আল-জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানিয়েছেন, হোসাম পূর্বে একটি হামলায় আহত হয়েছিলেন, তবুও তিনি তার দায়িত্ব পালনে অটল ছিলেন। এই হামলায় কোনো পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ২০৮-এ পৌঁছেছে। তারা এটিকে “পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের প্রয়াস” হিসেবে দেখছে এবং ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে দায়িত্ব নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। একই দিনে খান ইউনিসে আরেক সাংবাদিক, প্যালেস্টাইন টুডের মোহাম্মদ মনসুর, তার স্ত্রী ও ছেলেসহ নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।

ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে না এবং হামাসের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। তবে, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)-এর প্রধান জোয়ি গিনসবার্গ এই হত্যাকাণ্ডকে “যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “সাংবাদিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্য করা হচ্ছে কিনা, তা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।” সিপিজে জানিয়েছে, গত ১৭ মাসে গাজা ও লেবাননে ১৭০-এর বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যা যেকোনো সংঘর্ষে সাংবাদিকদের মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে অভূতপূর্ণ।

গাজায় চলমান এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গত সাত দিনে ইসরায়েলের তীব্র বোমাবর্ষণে ৭০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যাই শতাধিক। গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই হামলা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে আগ্রাসনের সূচনা করেছে। এদিকে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকায় খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই হত্যাকাণ্ড ও মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে, ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এখনও স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই নীরবতা ইসরায়েলকে আরও আগ্রাসী করে তুলছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি