বৃহস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৩:০৩

ইসরায়েলের অবরোধে গাজায় পোলিও টিকা বন্ধ, ঝুঁকিতে ৬ লাখ শিশু

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২৩, ২০২৫ ৯:০৭ অপরাহ্ণ
ইসরায়েলের অবরোধে গাজায় পোলিও টিকা বন্ধ, ঝুঁকিতে ৬ লাখ শিশু

ইসরায়েলের অবরোধে গাজায় পোলিও টিকা বন্ধ, ঝুঁকিতে ৬ লাখ শিশু

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও কঠোর অবরোধের কারণে মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ১৮ মাস ধরে চলা এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর পাশাপাশি গাজায় আরোপিত অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এবার ইসরায়েলের বাধার কারণে গাজায় পোলিও টিকা প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে ৬ লাখেরও বেশি শিশু গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে পোলিও টিকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু পোলিওর মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, টিকা প্রবেশে বাধার কারণে পোলিও প্রতিরোধে শুরু হওয়া চতুর্থ ধাপের টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, “টিকার সরবরাহ অব্যাহত না থাকলে এই শিশুরা পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।”

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, গাজার শিশুদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বর্তমানে “নজিরবিহীন ও ভয়াবহ”। অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার এবং নিরাপদ পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

আনাদোলুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্টে গাজায় ১০ মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে পোলিও ভাইরাস শনাক্ত হয়, যা ছিল এই অঞ্চলে প্রথম পোলিও সংক্রমণের ঘটনা। এরপর থেকে ইসরায়েলের চলমান হামলা ও অবরোধের মধ্যেও গাজায় জরুরি ভিত্তিতে পোলিও টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই কার্যক্রম তিনটি ধাপে পরিচালিত হয়েছিল। প্রথম ধাপে ৫ লাখ ৬০ হাজার শিশু, দ্বিতীয় ধাপে ১০ বছরের কম বয়সী ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৪ শিশু এবং তৃতীয় ধাপে ৫ লাখ ৯০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, পোলিও থেকে পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি শিশুকে কমপক্ষে দুটি মৌখিক পোলিও টিকা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু ইসরায়েলের অবরোধের কারণে এই টিকাদান কার্যক্রম এখন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ এবং হামলা শুধু প্রাণহানিই নয়, বরং মানবিক সংকটের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে গাজার বাসিন্দারা, বিশেষ করে শিশুরা, অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। পোলিও টিকার সরবরাহ বন্ধ হওয়া এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইসরায়েলের অবরোধ তুলে নেওয়ার এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে। তবে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

গাজার শিশুদের জন্য এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি কেবল একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। পোলিও একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ, এবং টিকার অভাবে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) গাজায় টিকাদান কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

গাজার এই মানবিক সংকট এবং শিশুদের প্রতি অবিচার বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুতর নৈতিক প্রশ্ন তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এখন প্রশ্ন, কবে এই শিশুরা তাদের ন্যায্য স্বাস্থ্য অধিকার ফিরে পাবে এবং কবে গাজায় মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশ করতে পারবে।

সূত্র: আনাদোলু

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত