চীন-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করলে উভয়েই হেরে যাবে : চীনা প্রধানমন্ত্রী
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় ফিরে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এর জবাবে চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা বর্তমানে দুদেশের সম্পর্ককে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং সম্প্রতি বেইজিংয়ে মার্কিন সিনেটর স্টিভ ডেইন্স এবং মার্কিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার সময় বলেছেন, “চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যদি আমরা শান্তি স্থাপন করতে পারি, তাহলে দুই দেশই লাভবান হবে। কিন্তু যদি আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি, তাহলে আমরা দুজনেই হেরে যাব।” রোববার (২৩ মার্চ) রাতে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এই মন্তব্যের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।
লি কিয়াংয়ের বক্তব্যে শান্তি ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “সংঘর্ষের বদলে আমাদের সংলাপের পথ বেছে নেওয়া উচিত। উইন-উইন সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যেতে পারি। আমরা চাই, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করে দুদেশের সম্পর্ককে সুস্থ, স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথে নিয়ে যাক।” ইংরেজি ভাষার চীনা সংবাদপত্র চায়না ডেইলি এই বক্তব্য তুলে ধরে লি’র শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি আহ্বানকে গুরুত্ব দিয়েছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, “চীন সবসময় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলোকে আমাদের দেশে স্বাগত জানায়। আমরা তাদের বৈধ দাবিগুলো পূরণে সক্রিয় থাকব এবং দেশি-বিদেশি সব কোম্পানির জন্য সমান সুযোগ ও সুস্থ ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করব।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি চীনের দরজা খোলা রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
মার্কিন সিনেটর স্টিভ ডেইন্স, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন সমর্থক, এই সাক্ষাতে চীনের অর্থনৈতিক উত্থানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “১৯৯১ সালে চীনের অর্থনীতি ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। গত ৩৪ বছরে আমরা চীনের অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ও পরিবর্তন দেখেছি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে আরও উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপ হবে। ডেইন্স এর আগে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক চীন উন্নয়ন ফোরাম ২০২৫-এ আমেরিকান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন।
এই ফোরামে চীনা অর্থনীতির সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়। দুই দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এই সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য চীনের বাজারে প্রবেশের সুযোগ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “বহিরাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত। যেকোনো অপ্রত্যাশিত ধাক্কার জন্যও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।”
বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান শুল্কযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এবং চীনের পাল্টা জবাবে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়লেও, লি কিয়াংয়ের বক্তব্যে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
