ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা: ছয় বা বেশি সন্তানের মায়েদের জাতীয় মেডেল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশে জন্মহার বৃদ্ধি এবং পারিবারিক মূল্যবোধকে উৎসাহিত করতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি সন্তান জন্মদানকারী মায়েদের জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা, বিয়ের মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনকে উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনা এবং বিশেষভাবে ছয় বা তার বেশি সন্তানের মায়েদের জন্য জাতীয় মেডেল প্রদানের পরিকল্পনা করছেন। সোমবার (২১ এপ্রিল) মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউস মায়েদের আরও সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন উপায় খুঁজছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে জন্মহার এতটাই কম যে, এটি অব্যাহত থাকলে দেশটি ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। কম জন্মহারের কারণে কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, যা অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এই সমস্যা মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে:
1. **বেবি বোনাস**: প্রতিটি নতুন মায়ের জন্য এককালীন ৫,০০০ ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদান। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো নতুন মায়েদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করা।
2. **স্কলারশিপ সুযোগ**: ফুলব্রাইট স্কলারশিপের ৩০ শতাংশ স্থান বিবাহিত আবেদনকারী এবং/অথবা সন্তানের মায়েদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এটি পারিবারিক জীবন এবং শিক্ষার প্রতি উৎসাহ প্রদানের একটি পদক্ষেপ।
3. **মাতৃত্বের জাতীয় মেডেল**: ছয় বা তার বেশি সন্তানের মায়েদের জন্য বিশেষ জাতীয় মেডেল প্রদান করা হবে। এই প্রতীকী স্বীকৃতির মাধ্যমে বৃহৎ পরিবার গঠনে মায়েদের অবদানকে সম্মান জানানো হবে।
4. **আইভিএফ ভর্তুকি**: ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) চিকিৎসার জন্য ব্যাপক ভর্তুকি প্রদান করা হবে। এই সুবিধা সন্তান জন্মে আগ্রহী দম্পতিদের জন্য আর্থিক বোঝা কমাবে।
এই উদ্যোগগুলো ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পারিবারিক মূল্যবোধ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতি তাঁর প্রশাসনের জোর দেওয়ার প্রতিফলন। তবে, এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সমর্থকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপগুলো জন্মহার বাড়াতে এবং পারিবারিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে, সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের প্রণোদনা নারীদের স্বাধীন পছন্দের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, জন্মহার বৃদ্ধির জন্য কেবল আর্থিক প্রণোদনা যথেষ্ট নয়। সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং শিশু যত্নের সুবিধার মতো বিষয়গুলো জন্মহার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ট্রাম্প প্রশাসন এই বিষয়গুলো কীভাবে সমাধান করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রে পারিবারিক নীতি এবং জনসংখ্যা গতিশীলতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে। তবে, এই প্রস্তাবগুলো কংগ্রেসে পাস হওয়া এবং জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।
এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভবিষ্যৎ গঠনে কী ভূমিকা রাখবে, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত, এই প্রস্তাব বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা নীতির দিকে সবার নজর রয়েছে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস