এরদোগানের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল তুরস্ক
তুরস্কে এখন রাজনৈতিক ঝড় বইছে! প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের পদত্যাগের দাবিতে দেশটির রাস্তাঘাট লাখো মানুষের ক্ষোভ আর প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে উঠেছে। শনিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, ইজমিরসহ প্রধান শহরগুলোকে উত্তাল করে তুলেছে। অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, এবং স্বৈরাচারী শাসনের অভিযোগে জনতা এরদোগানের ২০ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বিক্ষোভকারীদের একটাই স্লোগান—‘এরদোগান, পদত্যাগ করো!’
বিক্ষোভের মূল কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক দুরবস্থা সামনে এসেছে। তুর্কি লিরার মূল্য গত কয়েক মাসে রেকর্ড পরিমাণে পড়ে গেছে, মূল্যস্ফীতি ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, “আমাদের রুটি কেনার টাকা নেই, চাকরি নেই, আর এরদোগান শুধু ক্ষমতায় থাকতে চান।” এছাড়া, ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়র একরেম ইমামোলুকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনা বিক্ষোভে নতুন জ্বালানি যোগ করেছে। ইমামোলুকে অনেকে এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেন, এবং তার গ্রেপ্তারকে বিরোধীদের দমনের কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ারে লাখো মানুষ জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে। রোববার (২৩ মার্চ) পর্যন্ত বিক্ষোভ চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান, এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছে। শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করছে, এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের তুমুল সংঘর্ষ চলছে। একজন তরুণ বিক্ষোভকারী বলেন, “এরদোগান আমাদের গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছেন। আমরা শান্তি চাই, স্বাধীনতা চাই।”
এরদোগান সরকার এই বিক্ষোভকে “বিদেশি ষড়যন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করেছেন। একটি টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, “এই অরাজকতা তুরস্ককে অস্থিতিশীল করার জন্য পশ্চিমা শক্তি ও তাদের দালালদের চক্রান্ত। আমরা এটি সফল হতে দেব না।” তবে জনগণ তার এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। বিরোধী দল সিএইচপি ও ইয়ি পার্টির নেতারা বিক্ষোভে যোগ দিয়ে এরদোগানের পদত্যাগের দাবিকে আরও জোরালো করেছেন। সিএইচপি নেতা কিলিচদারোগ্লু বলেন, “এরদোগানের সময় শেষ। জনগণ তাকে আর সহ্য করবে না।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এরদোগানের মিত্র রাশিয়া এখনো নীরব। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হলে তুরস্কে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে তুরস্কের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে হ্যাশট্যাগ #TurkeyProtests ট্রেন্ড করছে।