শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:০৬

ইসরায়েলে ব্যাপক অন্তর্দ্বন্দ্ব, অর্থনীতির চাকা অচল হওয়ার শঙ্কা

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২২, ২০২৫ ৪:১৭ অপরাহ্ণ
ইসরায়েলে ব্যাপক অন্তর্দ্বন্দ্ব, অর্থনীতির চাকা অচল হওয়ার শঙ্কা

ইসরায়েলে ব্যাপক অন্তর্দ্বন্দ্ব, অর্থনীতির চাকা অচল হওয়ার শঙ্কা

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর ইসরায়েল লেবানন ও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এই সংঘর্ষের ফলে দেশের অর্থনীতি গভীর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হয়।

২০২২ সালে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৫%, যা ২০২৩ সালে কমে ২%-এ নেমে আসে। ২০২৪ সালে এই প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পেয়ে ১.১% হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পতনের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে সামরিক সংঘর্ষ, ভোক্তা ব্যয়ের স্থবিরতা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিঘ্নতা চিহ্নিত করা হয়েছে।

যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে ইসরায়েলের বাজেট ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৮.৩%-এ পৌঁছায়, যা পূর্ববর্তী মাসের ৮.০% থেকে বেড়েছে এবং ২০২৪ সালের লক্ষ্যমাত্রা ৬.৬% অতিক্রম করেছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত যুদ্ধ-সম্পর্কিত ব্যয় প্রায় ৯৭ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এই ব্যয় ২৫০ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ৬৭.৮ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছাতে পারে বলে ব্যাংক অব ইসরায়েল পূর্বাভাস দিয়েছে। ফলে, দেশের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৬৭%-এ উন্নীত হয়েছে।

সংঘর্ষের কারণে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের জন্য কাজের অনুমতি স্থগিত হওয়ায় নির্মাণ খাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে, ফলে অনেক নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষি খাতেও সংকট দেখা দিয়েছে, কারণ অনেক গ্রাম ও বাগান পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

এতকিছুর পরও, প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, যুদ্ধের ব্যয় বাজেটে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে সরকারি ঋণ রেটিং সংস্থাগুলো দ্বারা নিম্নমুখী হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ধীরগতির হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের ঋণ গ্রহণের খরচ বেড়েছে এবং ক্রেডিট রেটিং হ্রাস পেয়েছে। ফলে, ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৬৭%-এ পৌঁছেছে, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগজনক।

যুদ্ধের ব্যয়ের কারণে সরকারি বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। যদিও কর রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে, বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

ইসরায়েলের অর্থনীতি বর্তমানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের ব্যয়ের কারণে চাপে রয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়তে পারে।

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের ব্যয় দেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পতন, বাজেট ঘাটতি ও ঋণ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে বিঘ্নতা—সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা অচল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুদূরপ্রসারী ও কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ জরুরি।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি