গাজায় ইসরায়েলের নতুন আক্রমণ কেবল ‘শুরু’: নেতানিয়াহু
২০২৫ সালের মার্চ মাসে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন যে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাগুলো কেবল শুরু মাত্র। এই বিবৃতি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে।
মঙ্গলবার ভোররাতে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকায় আকস্মিকভাবে বিমান হামলা শুরু করে। পবিত্র রমজান মাসে সেহরির সময় এই হামলায় কমপক্ষে ৪০৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৬২ জনেরও বেশি আহত হন। ধসে পড়া ভবনের নিচে এখনও অনেক মানুষ আটকে আছেন, যা হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়াতে পারে।
হামলার পর ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতি কয়েক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছিলাম, যদিও বিনিময়ে আমরা জিম্মিদের ফেরত পাইনি।” তিনি আরও বলেন, “আমি হামাসকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে যদি তারা আমাদের বন্দিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে আমরা আবার যুদ্ধ শুরু করব — এবং আমরা তা করেছি।”
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির আওতায় হামাস ছয়জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, এর বিনিময়ে ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু দাবি করেন, হামাস ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান’ আয়োজনের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের অসম্মান করেছে। তিনি বলেন, “অপপ্রচারের জন্য জিম্মিদের ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের জন্য নিন্দনীয়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই ধরনের অপমানজনক অনুষ্ঠান বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে না।”
ইসরায়েলের এই নতুন হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু দেশ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছে, তবে অনেকেই বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে এবং শান্তি আলোচনায় ফিরে আসার তাগিদ দিয়েছে।
গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতে মানবিক পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে আহতদের সেবা দেওয়ার সক্ষমতা কমে গেছে, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের মধ্যে মানসিক ট্রমা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো দ্রুত সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করছে, তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই হামলাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে উপস্থাপন করছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এই ঘটনা প্রভাব ফেলছে, যেখানে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থন ও বিরোধিতা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর “এটি কেবল শুরু” মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। উভয় পক্ষের সংঘাত বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।