সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| বিকাল ৫:০৮

গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তুত

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ৪, ২০২৫ ৬:৫৬ অপরাহ্ণ
গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তুত

গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তুত

গাজায় যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে মিসর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেটির বিরোধিতা করে নতুন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছে মিসর। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার কায়রোয় অনুষ্ঠিত জরুরি আরব সম্মেলনে এই পরিকল্পনা উত্থাপন করা হবে, যাতে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হতে না হয়।

মিসর গাজার পুনর্গঠন ও যুদ্ধ পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং অর্থায়ন চাইবে বলে জানিয়েছেন আবদেলাত্তি। তিনি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো এই অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং পরিকল্পনাটি আরব শীর্ষ সম্মেলনে অনুমোদিত হলে প্রধান দাতা দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করা হবে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি গাজা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি সেখানে দীর্ঘদিনের যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান থেকে সরে আসেন এবং গাজাকে জোরপূর্বক খালি করার পরিকল্পনা করেন।

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আরব নেতারা গত ২২ ফেব্রুয়ারি রিয়াদে বৈঠক করেন এবং সরাসরি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের মতে, এটি ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েক দশকের সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেবে এবং গাজার বাসিন্দাদের অধিকার পদদলিত করবে। তবে আরব দেশগুলো এখনো ট্রাম্পের পরিকল্পনার কূটনৈতিক জবাব নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।

মিসর আজকের আরব লিগ বৈঠকে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিকল্প পরিকল্পনা হাজির করবে, যেখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটির পুনর্গঠন এবং মানবিক সহায়তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, আজকের বৈঠকের পর ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সৌদি আরবে একটি জরুরি বৈঠক করবেন, যেখানে ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।

বর্তমানে গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলছে, তবে এই বিরতি কতদিন টিকবে, তা অনিশ্চিত। গত শনিবার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার বদলে ইসরায়েল সাময়িকভাবে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়েছে। তবে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

মিসর ও কাতার, যারা এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী, তারা ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাস মানবিক সহায়তার চালান চুরি করে সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার করছে, তাই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এটি যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গের সামিল।

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি হামলা চলছে। সর্বশেষ গত রোববার ইসরায়েলি হামলায় আরও চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের কারণে ইসরায়েল সরকারের সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থার প্রধান টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট: আমাদের অবশ্যই জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহের অনুমতি দিতে হবে।”

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে লড়াই বন্ধ রয়েছে। চুক্তির অধীনে প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়েছে হামাস। তবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি বলেছেন, “এই চুক্তিকে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সংকল্প প্রয়োজন। এটি কঠিন হলেও সম্ভবপর।”

আজকের কায়রো সম্মেলনের পর সৌদি আরবে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকেও গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হবে, যেখানে ট্রাম্পের পরিকল্পনার পরিবর্তে বিকল্প সমাধান কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ