দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিল, তবে সময় বাড়ছে না: নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দল নিবন্ধনের শর্ত কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, যা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। ইসি জানিয়েছে, নিবন্ধনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ফলে যেকোনো নতুন রাজনৈতিক দল বছরের যেকোনো সময় নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে, এবং আবেদন জমা দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যার মেয়াদ আগামী ২০ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত তিনটি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে।
দল নিবন্ধনের শর্তে পরিবর্তন
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দল নিবন্ধনের শর্ত কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হয়। এছাড়া, দেশের এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলা (অর্থাৎ ২২টি জেলা) এবং কমপক্ষে ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর কমিটি থাকতে হয়, যেখানে প্রতিটি কমিটিতে ন্যূনতম ২০০ জন ভোটারের তালিকাভুক্তি প্রয়োজন।
নতুন সুপারিশ অনুযায়ী, এই শর্ত শিথিল করে প্রশাসনিক জেলার এক-দশমাংশ (অর্থাৎ ৬টি জেলা) এবং মোট উপজেলার পাঁচ শতাংশ (অর্থাৎ ৩০টি উপজেলা) কমিটি গঠন করলেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে। এছাড়া, মোট ৫ হাজার ভোটারের স্বাক্ষরসংবলিত সুপারিশ থাকলেই আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে। ইসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই শর্ত শিথিল হওয়ায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন ও নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ হবে, ফলে আসন্ন নির্বাচনে আরও বেশি দল অংশ নিতে পারবে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “তিনটি দল ইতোমধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তবে ২০ এপ্রিলের পর নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি।” তিনি আরও জানান, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ ছয় মাস সময় লাগে, এবং এই প্রক্রিয়া বছরব্যাপী চলমান থাকে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “নিবন্ধন বিধিমালায় নতুন দলের জন্য সময়ে সময়ে বিজ্ঞপ্তি জারির বিধান রয়েছে। সম্ভাব্য নির্বাচনের সময় ডিসেম্বর বিবেচনায় রেখে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।”
নির্বাচনের রোডম্যাপ ও প্রস্তুতি
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই লক্ষ্যে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। এছাড়া, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে, যদিও এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সংলাপ’ না বলে ‘মতবিনিময়’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
ইসি আরও জানিয়েছে, সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস আইনে কিছু ত্রুটি সংশোধনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই বিল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন হতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “আমরা বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করেছি এবং পুলিশ সুপার, নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, রমজান মাসে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল। এটি আরও উন্নত করার চেষ্টা চলছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ধারা অব্যাহত থাকলে নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা থাকবে না।”
নির্বাচনের আগে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন, সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
অন্যান্য উন্নয়ন
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী রোববার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এছাড়া, সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ইসি তাদের মতামত পাঠাবে।
বিশ্লেষকদের মতে, দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করার এই সিদ্ধান্ত নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়াবে। তবে, নির্বাচনের রোডম্যাপ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উদ্বেগ থাকায়, ইসির পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।