জ্বালানি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রচারণায় নেমেছে বাংলাদেশ সরকার
জ্বালানি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ সরকার। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে জ্বালানি বিভাগ প্রেজেন্টেশন তৈরি করে প্রচারণা চালাচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। প্রচারণায় বলা হচ্ছে, একটি সফল অংশীদারত্বের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মূলধনে দেশের উন্নয়ন সম্ভব।
‘ইওর স্ট্রাটিজিক ইনভেস্টমেন্ট ডেস্টিনেশন’, ‘এনার্জি ল্যান্ডস্ক্যাপ অব বাংলাদেশ’, ‘ইওর ক্যাপিটাল, আওয়ার গ্রোথ—এ উইনিং পার্টনারশিপ’ শিরোনামে প্রচারণার মাধ্যমে বিনিয়োগ আহ্বান জানানো হচ্ছে। এতে তুলে ধরা হয়েছে, কেন বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ লাভজনক হতে পারে।
প্রচারণায় জানানো হয়েছে, বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে চাহিদা হবে ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, যা ২০৩০ সালে পৌঁছাবে সাড়ে ৮ হাজারে। এই চাহিদা পূরণে সরকার ২০০টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে এবং একইসঙ্গে এলএনজি আমদানি করে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে।
এলএনজি আমদানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদনে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তেলের ক্ষেত্রে, বর্তমানে দেশে প্রতিবছর প্রায় ৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়, যার মাত্র ২০ শতাংশ পরিশোধন হয় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই চাহিদা বেড়ে হবে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এছাড়া, বার্ষিক এলএনজির চাহিদা এক দশমিক ৩ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ২০৩০ সালে হবে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
এছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববাজারে কয়লার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশও এখন কয়লার দিকেই নজর দিচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন কয়লার দাম ৬২ ডলার, যেখানে ২০২৩-২৪ সালে তা ছিল ২০০ ডলারের ওপরে। ফলে খরচ কমাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যদিও বেশিরভাগ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানিনির্ভর, তথাপি দেশীয় খনির মজুদের কথাও প্রচারণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ এ বিষয়ে বলেন, “আমাদের জ্বালানির চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, আর এ চাহিদা পূরণে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছাড়া সম্ভব নয়।” তিনি জানান, ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, “আমরা কাতারের সঙ্গে বৈঠক করেছি, এবং আরও অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।”