উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন সি আর আবরার
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার। বুধবার (৫ মার্চ) বেলা ১১টা ৮ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
শপথ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্য সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শপথ গ্রহণের পর বঙ্গভবনের কনফারেন্স রুমে নতুন উপদেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “অধ্যাপক সি আর আবরার একজন অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ ও প্রশাসক। তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষানীতি ও গবেষণার ক্ষেত্রে সি আর আবরারের বিশেষ অভিজ্ঞতা থাকায় তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, যিনি একসঙ্গে শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তবে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের ফলে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শুধু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অনেক দিন ধরেই দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাচ্ছিলেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাজ অত্যন্ত বিস্তৃত, তাই নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে কাজের ভার সামঞ্জস্য করা হচ্ছে।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর কয়েক দফায় উপদেষ্টা পরিষদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সরকার গঠনের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনিক সংস্কার, নির্বাচনী ব্যবস্থার পুনর্গঠন, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম এবং শিক্ষানীতি সংশোধনের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং নীতি সংস্কারের জন্য সি আর আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টা করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। মানবাধিকার, অভিবাসন নীতি এবং শিক্ষানীতির ওপর তার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, তার অন্তর্ভুক্তি শিক্ষাখাতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শপথ গ্রহণের পর সি আর আবরার বলেন, “আমি সরকারকে সহায়তা করতে চাই, বিশেষ করে শিক্ষানীতির আধুনিকায়নে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেন ভবিষ্যতের চাহিদার সঙ্গে মানানসই হয়, সেটিই হবে আমার মূল লক্ষ্য।”
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩-এ। এর মধ্যে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্রনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা কাজ করে যাচ্ছেন। নতুন উপদেষ্টার অন্তর্ভুক্তির ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজের গতিশীলতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর সি আর আবরারের প্রথম আনুষ্ঠানিক সভা আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।