ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ডন
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চরমে পৌঁছেছে। পুরনো ডনরা হয় গা ঢাকা দিয়েছে, নয়তো বিদেশে পালিয়েছে। কিন্তু তাদের শূন্যস্থানে জায়গা নিয়েছে নতুন প্রজন্মের সন্ত্রাসীরা। পিচ্চি হেলাল, ইমন, মুরাদসহ অনেক নতুন নাম এখন এই অন্ধকার জগতের শীর্ষে। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মগবাজার, শাহজাহানপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বাহিনী দাপটের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষত পিচ্চি হেলাল তার বাহিনী নিয়ে বর্তমানে ঢাকার পশ্চিম অঞ্চলে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। বিদেশে থেকেও সে চাঁদাবাজি, অস্ত্র সরবরাহ ও হত্যার নির্দেশ দিচ্ছে। তার বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে এবং না দিলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকার এমন কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে তার বাহিনী চাঁদার দাবি জানায়নি।
ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে আগের ডনরা যেমন যোসেফ, হারিছ, মানিক, এবং জিসানের মতো নাম শোনা যেত, তারা এখন আর সক্রিয় নেই। তবে তাদের জায়গা দখল করেছে পিচ্চি হেলাল, সুইডেন আসলাম, ফ্রিডম রাসুর মতো নতুন প্রজন্মের সন্ত্রাসীরা। এদের অধিকাংশই সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছে। তারা পুরনো শত্রুদের সরিয়ে নিজেদের বাহিনী গড়ে তুলছে। পাশাপাশি চাঁদাবাজি, টার্মিনালের তোলাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এসব সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ নিয়ে তাদের নজরদারি চলছে। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হচ্ছে। তাদের জামিন বাতিলের আবেদন করা হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। জনগণ তথ্য দিলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। মুরাদ তার বাহিনী নিয়ে মগবাজার ও শাহজাহানপুরে তাণ্ডব চালাচ্ছে। সাবেক এক কাউন্সিলরের শেল্টারে থেকে সে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। ফিনল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে কাইল্যা খোকন সবুজবাগ ও বাসাবো এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে। খিলগাঁওয়ে মাদক সম্রাট মকবুল তার প্রভাব ধরে রেখেছে, যদিও পুলিশ তাকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মিরপুর এলাকায় মামুনের বাহিনী এক আতঙ্কের নাম। বিদেশ থেকে পরিচালিত এই সন্ত্রাসী দল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক বিশাল অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে। মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও মামুন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে আন্ডারওয়ার্ল্ডে শুরু হওয়া এই নতুন অধ্যায় সাধারণ মানুষের জীবনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও অপরাধীদের আধিপত্যে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশ জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করা হবে এবং অপরাধীদের রুখতে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।